ইয়ানূর রহমান : বেনাপোলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করলেন মানবতার দূতখ্যাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডল। গতকাল রাতে প্রচন্ড শীতের বাতাসে হাড়গুলো যখন হিম হয়ে আসছিল, এলাকার মানুষগুলো যখন জড়সড় হয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগের আঘাতে জর্জরিত হয়ে উদ্বাস্তুর মতো পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আগুণ জ্বালিয়ে কিংবা ট্রেন লাইন বা রাস্তার পাশে শুয়ে অসহায়ের মতো নিরবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করছিল, ঠিক সেই সময়ে মানবতার দূত হয়ে কয়েক’শ অসহায় শীতার্ত মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলেন এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডল। তৃপ্তির হাসি ফোটালেন আর হাসলেন নিজেও।
চলমান
বৈরি আবহাওয়া চলছিলো। চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন। পথ টের পাওয়া যাচ্ছিলনা
একটুও। সাদা একটি জিপে কম্বল বোঝাই করে নিজ শীতকে পরাস্থ করে শীতার্তদের
সন্ধানে ছুটলেন নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডল। সাথে ছিলেন শার্শা
উপজেলা সহকারি কর্মকর্তা(ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী, প্রকল্প বাস্তবায়ন
কর্মকর্তা লাল্টু মিয়া ও শার্শা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তথা দৈনিক
স্পন্দন পত্রিকার শার্শা প্রতিনিধি ইয়ানুর রহমান। শার্শা উপজেলা পরিষদ থেকে
যাত্রা শুরু করে ডিহি ইউনিয়ন, নিজামপুর ইউনিয়ন, লক্ষণপুর ইউনিয়ন,
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌর এলাকার ট্রেন লাইনের ধারে বা ফুটপথের উপর
অসহায়ের মতো শুয়ে থাকা শীতার্ত মানুষের খুজে বের করলেন। গায়ে জড়িয়ে দিলেন
একটি করে কম্বল। একেক করে কম্বল পরিয়ে দিলেন এলাকার সংখ্যালঘু জেলে
সম্প্রদায়সহ অসহায় শীতার্ত মানুষের গায়ে। গায়ে দূর্গন্ধ? ময়লা কাপড় পরা?
কতো আপন করে যতœ সহকারে কাছে ডেকে নিয়ে নিজ হাতে কম্বল পরালেন আর
আত্মতৃপ্তির নিশ্বাষ ছাড়লেন। একে একে গায়ে দূর্গন্ধ ভরা মানুষগলোও বলে উঠল
মানবতার দূত! অনেকদিন বেঁচে থাকো।
কথা
হয় বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর মানকিয়া গ্রামের জেলে পাড়ার বাসিন্দা
শান্তিরাম বিশ্বাষের সাথে। বলেন, চলমান শৈত প্রবাহের তীব্র শীতে জনজীবন যখন
বিপর্যস্ত ঠিক তখনি নিজ শীতকে উপেক্ষা করে মধ্যরাতে কম্বল নিয়ে শীতার্ত
অসহায় মানুষের পাশে দাড়িছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডল।
অনেক শীত। তিনিসহ তাঁর সাথে যারা ছিলো সবাই শীতে কাঁপছিলো। তারপরেও তিনি
মানবতার দূত হয়ে আমাদের মতো অসহায় মানুষের বাড়িতে এসে শীতের কম্বল বিতরণ
করলেন যা আমাদেরকে আশ্চর্য করেছে। এমন সূর্য সন্তান দেশের প্রত্যেক উপজেলায়
থাকলে “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে বেশিদিন লাগবেনা” বলে তিনি
আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কথা
হয় শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডলের সাথে। বলেন, চলমান
শীতের প্রভাবে এলাকার মানুষগুলো যখন জড়সড় হয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে
জর্জরিত হয়ে উদ্বাস্তুর মতো পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন মানুষ হিসেবে
আমাদের অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। যার সামান্যতম হলেও কিছু অসহায় মানুষের
মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটাতে পারলে সেটিই হবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিদান।
এসময় তিনি আরো বলেন, চলমান শৈত প্রবাহে শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৬৭০০
কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতরাতে বিতরণ করা হয়েছে কয়েক’শ কম্বল। এসময় তিনি
সমাজের বৃত্তবানদের কাছে তাদের ঘুমন্ত মানবতা জাগ্রত করে অসহায় মানুষের
পাশে দাড়ানোর অহবান জানান। বলেন, আপনার সামান্য সহযোগিতায় অসহায় মানুষরা
মুক্তি পাবে অন্যদিকে আপনি নিজেও অনেক তৃপ্তি পাবেন।