“মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ” শিক্ষাবোর্ড গঠন সহ ৪ দফা দাবিতে মেডিকেল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস্) শিক্ষার্থীদের পথসভা ও স্মারকলিপি

// মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ “মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ” শিক্ষাবোর্ড গঠন সহ ৪ দফা দাবিতে মৌলভীবাজারে মেডিকেল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস্) শিক্ষার্থীদের পথসভা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে আজ ৩১ আগস্ট দুপুরে। ৪ দফা দাবী সমুহের মধ্যে- কমিউনিটি ক্লিনিক সহ স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরে ম্যাটস্ হতে পাশকৃত ডিএমএফ ডিগ্রীধারী ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে পদ সৃষ্টি ও দ্রুত নিয়োগ বাস্তবায়ন, এ্যালাইড হেলথ বোর্ড আইন-২০২৩ বাতিল করে অনতিবিলম্বে মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ নামে সতন্ত্র বোর্ড গঠন, ইন্টার্ণশীপ বহাল সহ অসংগতিপূর্ণ কোর্স কারিকুলাম সংশোধন ও বঙ্গবন্ধুর পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) মোতাবেক ম্যাটস্ শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করণ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্ট‘স এ্যাসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এর মৌলভীবাজার জেলার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক (সমন্বয়ক) বিকাশ মালাকার, সাবেক প্রতিস্টাকালীন যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইয়াছির আতিক খান,তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক ইমরান এ রউফ রাতুল, মৌলভীবাজার ম্যাটস শাখার যুগ্ন আহবায়ক নেওয়াজ, ন্যাশনাল লাইফ কেয়ার ম্যাটস, মৌলভীবাজার আবু সাঈদ আল মাসুদ, মৌলভীবাজার ম্যাটস সদস্য ফাইজা তাবাসসুম প্রমুখ। নেতৃবৃন্দরা বলেন-১৯৭১ সালের পরে এই যুদ্ধ পীড়িত ও যুদ্ধাহত নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, অনেক গরীব, দুঃস্থ্য, অসহায় মানুষের সামান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানও সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা প্রদান বাধ্যতামূলক করার জন্য বঙ্গবন্ধু’র সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৭৩-১৯৭৮ ইং মোতাবেক চিকিৎসা বিদ্যায় ‘ডিএমএফ’ কোর্স (ম্যাটস্) আন্তর্জাতিক ভাবে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক অধিভূক্ত, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ( ম্যাটস্ ) এর মাধ্যমে ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা চিকিৎসকতা পেশা কোর্সটি প্রথম যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এদেশে ১৬ টি সরকারি ম্যাটস্ ও প্রায় ২০১ টি বেসরকারি ম্যাটস্ ডিপ্লোমা চিকিৎসকের ‘ডিএমএফ’ কোর্স টি পরিচালনা করে আসছে। এখানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধ লাখ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সহ জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন। দেশের প্রান্তীক পর্যায়ের জনগোষ্ঠির চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তুলেছেন ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক। বিশ্বের জন্য একটি রোল মডেল। কিন্তু এ সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং দক্ষ চিকিৎসক না থাকায় জনগন এখান থেকে সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিকে যে সকল সিএইচসিপিরা চিকিৎসা প্রদান করেন, তাদের চিকিৎসা শিক্ষায় নূন্যতম কোন ডিগ্রী নাই। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট ২০১০ এর ২২ (ক) উপ-ধারায় বলা হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ব্যাতিত কেউ এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা দিতে পারবেন না। এমতাবস্থায় সিএইচসিপিদের চিকিৎসা দেওয়া যেমন নিয়ম বহিঃর্ভুত তেমনি চিকিৎসা শাখা তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এমতাবস্থায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যদি ম্যাটস্ থেকে পাশকৃতদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে নতুন পদ সৃষ্টি করে তাদের পদায়ন করা হয় তাহলে একদিকে যেমন ম্যাটস্ এর বেকারত্ব দূর হবে তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্টির প্রকৃত চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে। ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের যেন মেডিকেল সায়েন্সে কনডেন্সে উচ্চশিক্ষা ব্যাচেলর অব মেডিসিন এন্ড ব্যাচেলর অব সার্জারী ‘এমবিবিএস’ কোর্স করার সুযোগ দেয়া হয়। সকল ম্যাটস্ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবী, উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সৃষ্ট ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ‘ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ ডুয়েট এর মতো স্বতন্ত্র ‘মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা। ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ স্বপ্ন দেখেন যে, তারা উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসক হয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতকে জনগণের দোর গোঁড়ায় পৌঁছে দেবেন, চিকিৎসা সেবা খাতকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজড করবেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বিগত ০৭-০৮-২০২৩ খ্রিঃ তারিখে মন্ত্রীসভার বৈঠকে বাংলাদেশ এলাইড হেলথ শিক্ষাবোর্ড আইন-২০২৩ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ডিপ্লোমা চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী করার জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ এলাইড হেলথ শিক্ষাবোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। কিন্তু উল্লেখিত বোর্ডের শিরোনামে “এলাইড হেলথ” শব্দটি গুলো ম্যাটস শিক্ষার্থী ও ম্যাটস্ থেকে পাশকৃত ডিএমএফ সনদ ধারী ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের পেশার জন্য সাংঘর্ষিক। ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিডিএমএ) এর দাবির প্রেক্ষীতে গত ২৯-০৬-২০০৯ খ্রিঃ তারিখ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রলালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি নামের পরিবর্তন করে “মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ” নামে নামকরন করা হবে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যার স্বারক নং- স্বাপকম/চিশিজ/বেসমেক ও ডেকাহা-১/২০০৯/৬১২ তারিখ ২৩-০৭-২০০৯ ইং। তাই বাংলাদেশের হাজার হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক ও ম্যাটস্ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি “মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ” নামে শিক্ষাবোর্ড গঠন করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। কোর্স কারিকুলাম সংশোধনের প্রস্তাবনা সমূহ: কোর্সের নাম : ১৯৮৫ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী Diploma in Medical Assistant Course এর স্থানে Diploma in Medical Faculty করার নির্দেশ যার দরুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ইহা বাস্তবায়ন করেছে উক্ত বিষয় বিবেচনা করে বর্তমানে কোর্সের পূর্ণ নাম Diploma in Medical Faculty Course কোর্স উল্লেখ করা। ভর্তি যোগ্যতা : এসএসসি /সমমান (বিজ্ঞান বিভাগ) রাখা এবং নূন্যতম জিপিএ ৪.০০ করা। কোর্সের সময়সীমা : ৪বছর একাডেমিক ও পূর্বের ন্যায় ০১বছন ইন্টার্রশিপ বহাল রাখা। বিষয় বাড়ানো ও বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষার নম্বর বৃদ্ধি করা (নূন্যতম সর্বমোট ২৬০০ নম্বর) ও সিলেবাস বৃদ্ধি করা । বিশেষ করে ফার্মাকোলজি বিষয়ে সিলেবাসে গ্রুপ ভিত্তিক জেনেটিক ড্রাগ বৃদ্ধি করা।