এমন কোনো চাপ নেই শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তবে আমি বিশ্বাস করি এতে কেউ কিছু করতে পারবে না। হয়ত সাময়িক কিছু একটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু তা মোকাবিলা করবে আমাদের জনগণই। তিনি বলেন, এমন কোনও চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ। আর উপরে আল্লাহ আছেন। আমার বাবার আর্শীবাদের হাত আমার মাথায় ওপরে আছে। কাজেই কে কী চাপ দিল, না দিল, তা নিয়ে আমার কিছু আসে যায় না। জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে যা কিছু করার তা আমি করব। এরকম বহু চাপ আমাকে দেওয়া হয়েছিল। পদ্মাসেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। অনেক চাপের পরও কিন্তু নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মাসেতু বানিয়ে দেখিয়েছি। ৭০ বছর বয়সেও একটা লোক ব্যাংকের এমডি থাকতে চায়, সেই চাপও শেখ হাসিনা সহ্য করেছে। গতকাল সোমবার বিকালে গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি কাতার সফরে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত এই সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরকম বহু চাপ ছিল, পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনও একটা দেশের সেই রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন! কেন? একটা ভদ্রলোক, তাকে একটি ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু তা তো আমি জানি না। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ কিংবা বৈঠক প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সঙ্গে কীসের বৈঠক? তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে সংলাপ করেছি, রেজাল্টটা কি, নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ ছাড়া কিছুই করেনি। ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়েছে। এরপর নিজেরা নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেজন্যই সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী পরিমাণ কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনই নেবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এজেন্সি উন্মুখ হয়ে আছে। ৪০ জনের নামে (ওয়াশিংটন পোস্টের বিজ্ঞাপন) যেটা এসেছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যামভিশন আছে। এতে কোনও সন্দেহ নেই। যাদের ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে। নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, তার জন্য নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সংশোধনী বা সংস্কার আনা হয়েছে।

রোজায় বেশি কিনে ঘরে মজুদ করবেন না: প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি। রোজার মাস সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা আছে জানিয়ে সবাইকে বেশি কিনে মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুদ করি। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুদ করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে। আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুদ করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কোনো বিবৃতি নয়, এটা একটা বিজ্ঞাপন। আমাদের দেশের এক ব্যক্তি খয়রাত করে এটি দিয়েছেন। যিনি এতো নামিদামি নোবেলপ্রাপ্ত তার ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে বিজ্ঞাপন দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়। দেশে আইন আছে। আইন অনুযায়ী দেশ চলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দুই বোনের ৫ ছেলে মেয়ে। তারা দেশের জন্য আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক অভিলাশ নেই। নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছি তিনিও একজন পোড়খাওয়া মানুষ। তার (মো. সাহাবুদ্দিন) মধ্যে দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক সচেতনতা, দেশপ্রেম ও ব্যক্তিত্ব আছে।