ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
আসন্ন উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাস্থলে দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং দলীয় কার্যালয়ের মধ্যেই একাধিক নেতা-কর্মীদের ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে অভ্যর্থনা জানানোকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষ ও ছুরিকাঘাতে আহতরা হলেন ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু , সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথা, আওয়ামী লীগ নেতা আবু কালাম, মুলাডুলি ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার মালিথা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির মালিথা, পৌর যুবলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লব, উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে যুবলীগ কর্মী নাজিম উদ্দিন রনি খান, পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেন লাবু, রিকশা চালক ওলিউর রহমান, যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম, ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলবার হোসেন ও যুবলীগ নেতা আমিরুল ইসলাম। এসময় ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টুও সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যদর্শীরা জানান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, পাবনা সদরের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপিসহ পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের উপস্থিতিতেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার আকস্মিকতায় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, পাবনা-৪ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে অভ্যর্থনা জানাতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতারা অপেক্ষায় ছিলেন। অভ্যর্থনায় সামনে থাকাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথার মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এরই রেশ ধরে তাৎনিকভাবে পৌর আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলের চেয়ার ছুঁড়ে একে অপরের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এসময় মারামারি থামাতে ব্যর্থ হন। পরে দফায় দফায় সংঘর্ষ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের মধ্যেই ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন যুবলীগ নেতা সানোয়ার হোসেন লাবু ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খানের ছেলে রনি খান। তাদের দু’জনকে প্রথমে পাবনা ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের সময় ঈশ্বরদী শহরের স্টেশন রোডে ও বাজার এলাকার দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে উৎসুক জনতা রাস্তায় সমাবেত হয়। এসময় শহরের মেইন রোডে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হলে বাজারে আসা শত শত মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। আতঙ্কিত মানুষদের এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, এ ঘটনা নৌকার নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে নৌকার বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথা বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিন্টু ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে ঈশ্বরদীর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য জেলা কমিটিকে বলা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত এ ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা-কর্মী জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাবনা জেলা যুবলীগের আহব্বায়ক আলী মূর্তজা সনি বিশ্বাস ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর যুবলীগের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই স্থগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেখ নাসীর উদ্দীন এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন, আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের কারনে এ ঘটনা ঘটেছে। শহরে পুলিশ মোতায়েন ও বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোন পক্ষই এখনও থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে শহরের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ##