বিত্ত বৈভব, আত্ম অহংকার, সামাজিক মান-মর্যাদার ঘাটতি থাকা সত্বেও মানবিক গুনাবলীতে তিনি শ্রেষ্ঠ একজন মানুষ।‘ মানুষ মানুষের জন্য ’ এমন উদাহরণের বাস্তব প্রমাণ দিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠতম মানুষ হিসেবে দেশের কাছে -দশের কাছে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি হলেন একজন পেশাদার ভিক্ষুক। নাম নাজিমুদ্দিন। বৈশি^ক করোনাভাইরাস মহামারিতে সারা বিশ^ যখন তালমাটাল। সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারও গভীরভাবে তখন উদ্বিঘœ। কি করলে কি হবে , কেমন করে এই অনাকাঙ্খিত বিপদ থেকে মুক্তি মিলবে এ নিয়ে এদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষ পেরেশান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য বিশে^র অন্যান্য দেশের মত সমগ্র দেশকে লকডাউনের আওতায় নিয়ে সব কিছু বকন্ধ করে দেন। এমনকি মানুষকে নিনিজ ঘর থেকে বাইরে বেরুনোতেও নিশেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অফিস- আদালত, দোকান-পাট, যানবাহন বন্ধ থাকায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকার থেকে চাল-ডাল, আটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র এবং সেই সাথে নগদ অর্থ বরাদ্দ দেন এবং সুষ্ঠুভাবে তা বিতরণের ব্যবস্থা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য আহবান জানান।
বলতে গেলে সেঅই আহবানে সাড়া দিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের সহায়তায় ১০ হাজার টাকা দান করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন শেরপুর জেলার ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন। ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে নাজিমুদ্দিন (৮০) ভিক্ষা করে সংসার চালান। ভাঙা বসতঘর মেরামাত করার জন্য দুই বছর ধরে ভিক্ষা করে তিনি ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। ঐ টাকা তিনি কোভিড-১৯ মহামারিতে ঘরবন্দি কর্মহীন মানুষের জন্য ২১ এপ্রিল-২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেন। টাকাটা তিনি ইউএনও রুবেল মাহমুদের কাছে ত্রাণ তহবিলের জন্য দেন। ইউএনও বলেন, নাজিমুদ্দিনের টাকা দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।এই দান করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসলে ইউএনওকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব-(১) সালাহ উদ্দিন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নাজিমুদ্দিনকে ভিটামাটি ও পাকা বাড়ি করে দেওয়ার নির্দেশ আসে। রাতেই ইউএনও ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিনের বাড়িতে যান।
পরদিন ২২ এপ্রিল দুপুরে শেরপুর জেলা প্রশাসকের সন্মেলন কক্ষে নাজিমুদ্দিনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এদিন তার হাতে ২০ হাজার টাকা ও প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রি তুলে দেন জেলাপ্রশাসক। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাকে ত্রাণ-সামগ্রি প্রদান করা হয়। সুত্র জানায় এই দৃষ্টান্তমূলক ও হৃদয়গ্রাহি ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীন নজর কেড়েছিলো। তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটি আধুনিক বাড়ি তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেই ওই বৃদ্ধ দরিদ্র ব্যক্তির জন্য বাড়ির নকশা চুড়ান্ত করেন।
শুধু তাই না।২৭ এপ্রিল সকালে করোনাভাইরাস বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শেরপুর জেলাসহ আরো কয়েকটি জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন,‘‘ ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন সারা বিশে^ একটি মহৎ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।’’ এসময় তিনি সবার উদ্দেশ্যে ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। এ আলোচনার সময়কাল ছিলো দুই মিনিট পাঁচ সেন্ডে।আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ এতো বড় মানবিক গুণ অনেক বিত্তশালীর মাঝেও দেখা যায়না। একজন নিঃস্ব মানুষ যার কাছে এই টাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ওই টাকা দিয়ে সে জামা-কাপড় কিনতে পারতো, ঘরের খাবার কিনতে পারতো। এছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ে যে অসুবিধা ওই টাকা দিয়ে সে নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারতো। আর এ অবস্থায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা পাওয়াও মুসকিল। কিন্তু সেসব চিন্তা না করে নাজিমুদ্দিন তার শেষ সম্বলটুকু দান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাঝে এখনো সেই মানবিকতাবোধ আছে। সেটা পাই আমরা নিঃস্বদের কাছ থেকেই। দেখা যায় অনেক বিত্তশালীরা হা হুতাশ করে বেড়ায়, তাদের নাই নাই অভ্যাসটা যায়না। তাদের চাই চাই ভাবটাই সব সময় থেকে যায়। ”
শেখ হাসিনা নাজিমুদ্দিনের মহনাভবতায় মুগ্ধ। তাই তার নামে ১৫ শতাংশ সরকারি খাস জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়ে এ্কটি আধুনিক বাড়ি তাকে উপহার দিলেন। তার মহানুভবতা কি কম। ২০১০ সালের প্রথম সপ্তাহে পুরানো ঢাকার নিমতলির অগ্নিকান্ডে স্বজন হারানো তিন মেয়েকে নিজের আপন মেয়ে বানিয়ে সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে এক অসাধারণ মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া মায়ের কোল যেন নতুন করে ফিরে পেয়েছে সেই তিন দুখিনী মেয়ে।
নাজিমুদ্দিনকে খাস জমি বন্দোবস্তসহ বাড়ি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে ইউএনও জানিয়েছেন।
এতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মহানুববতার বহিপ্রকাশ ঘটেছে বৈকি। জননেত্রি শেখ হাসিনার বেলায় এমন ভুরি ভুরি উদাহরন রয়েছে। তিনি যেমন কঠোর তেমনি কোমল হৃদয়ের মানুষ।