পাবনা প্রতিনিধি : বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৃহত্তর পাবনার কৃতি সন্তান মোহাম্মদ নাসিম শনিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। ( ইন্নালিল্লাহি রাজেউন)। ৭২ বৎসর বয়সী মোহাম্মদ নাসেমের মৃত্যুতে পাবনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাবনার বিভিন্ন ব্যাক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বর্ষিয়ান এই নেতার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক জানিয়েছেন। পৃথক বিবৃতিতে এ সব নেতৃবৃন্দ বলেন, নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উজ্জল নক্ষত্রের পতন ঘটল বিষেশ করে গোটা উত্তরাঞ্চল একজন বলিষ্ট রাজনৈতিক নেতাকে হারালো। যার শুন্যস্থান কখনই পুরন হওয়ার নয়।
মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতেশোক জানিয়েছেন, দুদকের সাবেক কমিশনার আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির উপদেষ্টা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি, নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপি, ভাঙ্গুড়া আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল জব্বার সানা, পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, পাবনা ডায়বেটিক সমিতির সভাপতি বেবী ইসলাম, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সামাদ খান মন্টু সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাবিবুর রহমান তোতা, ঐক্য ন্যাপ কেন্দ্রিয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা সভাপতি রণেশ মৈত্র পাবনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদ, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শহীদ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারোফ হোসেন, পাবনা শহীদ এম মনসুর আলী কলেজের সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ খান, কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আশিকুর রহমান সবুজ, পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. তসলিম হাসান সুমন, সাধারণ সম্পাদক শাজাহান মামুন. দপ্তর সম্পাদক শরিফুল হক পলাশ, চাটমোহর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাষ্টার, সুজানগর উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন, ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ, আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তানভির ইসলাম, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ, পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগ, ক্যাব পাবনা জেলা শাখার সহসভাপতি অধ্যক্ষ জেবুন্নুচ্ছো ববিন সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহবুব আলম, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মির্জা আজিজুর রহমান, পাবনা জেলা যুবলীগ আহবায়ক আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনি, যুগ্ম আহবায়ক শিবলী সাদিক প্রমুখ।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। পাবনায় বেড়ে উঠা এবং সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে রাজনীতির হাতে খড়ি মোহাম্মদ নাসিমের।
তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।
তার পিতা অন্যতম জাতীয় নেতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালযয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন। পারিবারিক জীবনে নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৪-১৮ সরকারে নাসিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত আছেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।
ছাত্রজীবনের প্রথম দিকে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। পরে অল্প কিছু দিন ছাত্রলীগের রাজনীতিও করেন। ছাত্ররাজনীতি ছাড়ার পরে যুবলীগের রাজনীতি করলেও ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিমকে দলের একমাত্র সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর টানা তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন।
মোহাম্মদ নাসিম ভোটের রাজনীতিতে অত্যন্ত সফল। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেননি নাসিম। ওই নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমকে আবার মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সে সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় নির্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। রোষানলের শিকার হয়েছিলেন ১/১১ সরকারেরও। সে সময় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে কাটান তিনি। পাশাপাশি এই সময়ে চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন