আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখতে বসেছি যার আজ আমাদের মাঝে বেঁচে থেকে মধ্যে গগনের সূর্যের মত প্রজ্জ্বলিত থাকার কথা। যার মেধা শ্রম মননশীলতা ও সেবার মাধ্যমে হাজারো মানুষ তার নিজের আলোয় আলোকিত হওয়ার কথা ছিল। তিনি ধ্রুবতারার মতো পথপ্রদর্শক ছিলেন। আলোক বর্তিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের ছড়িয়েছেন। মেহনতি মানুষের কথা বলতে গিয়ে রক্ত ঝরিয়েছেন পিচঢালা কাল রাজপথে। বাংলা ও বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ মুক্তির আন্দোলন ও সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বুকে ধারণ করেছেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটাকে। যার কিঞ্চিত আঘাতে ছনছন করে বেজে উঠছে তাঁর হৃদয়ের গভীরে। তাইত বাংলা মায়ের প্রতিটি আঘাতের জবাব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ছয় দফা, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা উত্তর প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগে হাতেখড়ির পর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে নিজেকে তৈরী করেছেন একজন সৎ , নির্বিক রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে। নিজেকে তৈরী করেছেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ শ্রমিক নেতা এবং আদর্শের প্রতিক হিসেবে। বলছিলাম গাজীপুরের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নেয় ভাওয়াল বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্ল্যাহ মাস্টার এমপির কথা। আজ ষোল বছর পার গেল এ মানুষটি আমাদের কাঁদিয়ে ঘাতকের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে বিদায় নিলেন এই পৃথিবী থেকে। শুধু একটি হৃদপিন্ডই ঝাঁঝরা হয়নি গোটা গাজীপুরের মানুষের হৃদপিন্ড তথা সারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদপিন্ড ঝাঁঝরা করে দিল। সেই ক্ষত বিক্ষত হৃদপিন্ড থেকে আজো রক্ত ঝরে। আজো আমরা বুঝতে পারি না চুয়ান্ন বছর বয়সে তাঁকে আমাদের মাঝ থেকে চির বিদায় নিতে হল। আজো আমরা বুঝতে পারি না ঘাতকের বুলেটে কেন তাঁকে শহীদ হতে হয়েছিল। তাঁর সততা,ন্যায়নিষ্ঠা, কর্মতত্পরতা, দেশপ্রেম, দেশের আপামর শ্রমজীবী জনসাধারণের কন্ঠস্বর রোধ করার জন্য সেদিন রাষ্ট্রযন্ত্র কি এ কাজ করেছিল। আজও মানুষের মনে এ প্রশ্ন উদয় হয়। আজও কেন তাঁর ঘাতকেরা বাংলার মাটিতে ও বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আজও কেন তাঁর ঘাতকের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে পারছি না। আজ এই দিনে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্যারের হাজারো স্মৃতি আমাদের চোখের সম্মুখে জ্বলজ্বল করে। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের অনেক ঘটনা আমরা পরম্পরায় জানি বা শুনেছি। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্যারের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করে একটি ক্ষুদ্র স্মৃতির কথা সকালের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। নব্বই দশকের শেষের দিকের ঘটনা এটি। কোন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন জেনে আমরাও সেখানে উপস্থিত হই। যথারীতি যথাসময়ে তিনি সাদা পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা পরে অনুষ্ঠানে এসে হাজির হন। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে একটি টেবিলে বসলেন। সেই টেবিলে একটি ছেলে খাবার পরিবেশন করছিল। হঠাতই ছেলেটির খাবার পরিবেশনের সময় মাংসের ঝোল স্যারের শরীরের উপর পরে যায়। উপস্থিত অনেকই ছেলেটিকে ধমক দিতে উদ্ধত হলে তিনি সকলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন এমনটা হতেই পারে তাকে ধমকানোর মতো কিছু হয়নি আপনারা সকলে খাওয়া দাওয়া করেন। সে অবস্থায় সবাইকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে পাঞ্জাবি খুলে একটু বিশ্রাম নিতে গেলেন। এমন সময় ছেলেটি আস্তে আস্তে স্যারের কাছে গিয়ে বলল স্যার আমি খুবই লজ্জিত। স্যার ছেলেটিকে কাছে টেনে নিলেন বললেন এই স্মৃতি চিহ্ন টুকুই আমাদের মনে থাকবে। এবার ছেলেটি সাহস করে বলল স্যার আমি লম্বা পাঞ্জাবি পরি আমার একটি সাদা পাঞ্জাবি আছে আমি নিয়ে আসি বলেই দে ছুট । এক দৌড়ে পাঞ্জাবি নিয়ে হাজির। স্যার পাঞ্জাবির ভাজ খুলে দেখল তাঁর গায়ে লাগতে পারে। তিনি গায়ে দিলেন তাঁর মাপমতো হল। ছেলেটিকে বললেন তুমি এত লম্বা পাঞ্জাবি পর। তোমার উচ্চতা স্বাস্থ্যও আমার চাইতে কম। ছেলেটি হ্যাঁ স্যার। ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে স্যার চলে গেলেন কোন সংকোচ করলেন না। স্যারের এই ব্যবহার দেখে তখনও উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হয়েছিল। আজও আপন মনে ভাবি বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ কর্মী থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন সহযোদ্ধা হয়ে একজন মাননীয় সংসদ সদস্য কি পরিমাণ অমায়িক হতে পারে। হতে পারে কি পরিমাণ বিনয়ী। মুগ্ধতায় ভরে ওঠে যখন বুঝি এ মানুষটি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ আমাদেরকে উপহার দিয়েছিল। এখানেই থেমে থাকেননি তাঁর যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ কর্মী হয়ে জাতি গঠনে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন শিক্ষকতার মতো মহান পেশায়। তাঁর একাগ্রতা ও নিষ্ঠার প্রতিফলন স্বরূপ তাঁকে দুই বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর ২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একজন নির্ভীক সহযোদ্ধা হিসেবে এ দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করার নিমিত্তে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের জন্য দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যেখানেই শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের উপর নির্যাতন হয়ছে তাদের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ছুটে গেছেন আপন ভাই ও বন্ধুর মতো। তাইত সবাই তাঁকে আপন করে নিয়েছিল নিজের মতো করে।আজকের এই দিনে আমরা স্বরণ করি আমাদের গাজীপুরের কৃতি সন্তান অকাল প্রয়াত ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপিকে। ২০০৪ সালে ঘাতকের বুলেটে তাঁর বাড়ির সামনে তাঁর প্রিয় স্কুল এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই দিনে আল্লাহ্ তালার কাছে প্রার্থনা করি আমাদের স্যারকে যেন বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি উপর থেকে দোয়া করবেন যেন তাঁর সুযোগ্য সন্তান বর্তমান সরকারের মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি মাননীয় সংসদ সদস্য গাজীপুর-২ তাঁর পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন নির্ভীক সহযোদ্ধা হিসেবে তাঁর পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। পিতা হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে গাজীপুর তথা গোটা বাংলাদেশকে সোনার বাংলা বিনির্মাণের একজন কারিগর হতে পারে।
মোহাম্মদ কানিছুর রহমানউপ-রেজিস্ট্রার ও পিএস টু ভাইস-চ্যান্সেলরমাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সন্তোষ, টাঙ্গাইল-১৯০২।