প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী ক্ষুধার্ত থাকবে না ঘোষণা বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের

৮ম শ্রেণীর ছাত্র মো: নাজমুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বাবা তার দিনমজুর, কিন্তু করোনা দুর্যোগে তার বাবা কর্মহীন হয়ে বর্তমানে বাড়িতেই অবস্থান করছে কোনরকম দিন পার হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার ভরসায়। দেশব্যাপী চলা সাধারণ ছুটিতে বিদ্যালয়ও বন্ধ কিন্তু বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও তার ফোনে একদিন আসে অধ্যক্ষের ফোন। পড়াশোনার খোঁজের পাশাপাশি পারিবারিক অবস্থার খোঁজ খবরও নেন স্যার। তারপর স্যারের ফোনেই আজ এই খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি। এটা পেয়ে আমার বাবার কিছুদিনের চিন্তা সত্যিই দূর হলো। এমন কিছু আবেগঘন কথা বলছিল বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম। দেশব্যাপী চলা সাধারণ ছুটি এবং লকডাউনে ইতিমধ্যেই হাজারো খেঁটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পরেছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও করোনা দুর্যোগে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কথা ভোলেনি বগুড়ার পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ পরিবার। প্রতিষ্ঠানের এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ফোন করে খোঁজ নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদেরকে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসহায়তা যা বগুড়ায় প্রথম কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছে। ‘নিজে নিজ ঘরে থাকি, করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করি’ স্লোগানে প্রতিষ্ঠানের মানবিক অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনুর নেতৃত্বে এবং ব্যবস্থাপনায় খাদ্যসহায়তা প্রদানের ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে ৩য় পর্যায়ে শিক্ষার্র্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এসময় নিজে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার)। সকলের উদ্দেশ্যে রাখা বক্তব্যে এসময় জেলা পুলিশ সুপার বলেন, করোনা দুর্যোগে অত্র প্রতিষ্ঠানের কোন দরিদ্র ও এতিম শিক্ষার্থী না খেয়ে থাকবেনা। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রতিনিয়ত প্রতিটি শিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত যতটা সম্ভব তাদের ভাল রাখতে সবটুকুই করা হবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার হযরত আলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মাহবুব মোর্শেদ, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমন্ডলী যথাক্রমে কাজী মঞ্জুরুল হক, ইয়াসমীন সুলতানা, শহীদুল ইসলাম, আঞ্জুয়ারা খাতুন প্রমুখ। খাদ্যসামগ্রীস্বরুপ প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হয়েছে ১০ কেজি চাল, ডাল, ২ কেজি আলু, ২ কেজি মিষ্টি লাউ, ১ কেজি পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, লবন এবং ছোলাবুট। মানবিক এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু বলেন, করোনা দুর্যোগের এই ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের পাশে দাঁড়ানো তাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দরিদ্র তহবিল এবং কল্যাণ তহবিল থাকে তা ব্যবহার করার উপযুক্ত সময় এটিই বলে মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষার্থীদেরকে খাদ্যসহায়তা প্রদানের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান বগুড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রথম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া এই অধ্যক্ষ।