সিন্ধুর প্রত্যাশা বিন্দুতে!

(এক)

জ্ঞান অর্জনে প্রচলিত দুটি পথ আছে, প্রথমতঃ দেখে,শুনে,পড়ে তথা পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা সাধারণ লব্ধ জ্ঞান। দ্বিতীয়তঃ সাধারণ জ্ঞানকে ধ্যানে কর্ষিত করে লব্ধ জ্ঞান বা তাত্ত্বিক জ্ঞান যা ধ্যানিক শ্রেনীর মানুষ করে থাকে। জ্ঞানের বহুমাত্রিক যাত্রায় সাধারণ জ্ঞান বিচার বিশ্লেষিত হয়ে বহু পথ পাড়ি দিয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানে রূপান্তরিত হয় যা অধিকতর বুদ্ধিদীপ্ত যৌক্তিক পরিপক্ক এবং কখনও তা আধ্যাত্মিক সত্ত্বা লাভ করে। আমার এ প্রচেষ্টায় উভয় পথকেই যৎ সামান্য ব্যবহারের প্রয়াস নিয়েছি।

মানুয়ের বিচিত্রতা,জটিলতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে সীমাহীন বৈচিত্রে শোভিত বিচিত্র এ ধরনীতে জন্ম অতঃপর লালিত পালিত হওয়া মানুষ স্বভাবজাত ভাবেই বিচিত্র মননের। বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান,আবহাওয়া,জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতুলতা-অপ্রতুলতা, সংস্কৃতি,অসম শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদির প্রভাব মানুষের বৈচিত্রময়তার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রাণ বৈচিত্রে ভরপুর পৃথিবীতে লাখো চিহ্নিত প্রজাতির বাইরে হাজার কোটি অচিহ্নিত প্রজাতিও রয়েছে। তদুপরি মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সম্ভবত তার ভোকাল কর্ড এবং বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষমতা থাকার কারণেই। আর বুদ্ধিবৃত্তির আধুনিক চর্চায় এবং একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতা মানুষকে অনেক বেশী জটিল ও বিচিত্র করেছে এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকার কোন অবকাশ নেই। সেই সাথে সাদা-কালো,ব্যবসা-বাণিজ্য,ভাষা,ধর্ম ও সাধারণ বিশ্বাস,জাতি,রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়গুলোর ভাবনা মানুষের মনকে আরো বেশী জটিলতর করে তুলেছে। তাত্ত্বিকতা বিশ্লেষণে মানুষের মনের লক্ষকোটি ভাবনাও মানুষের চরিত্রে বিচিত্রতার ছাপ রেখেই চলেছে।

মানুষের ভেতরে জাগ্রত উদ্দিপনা তাড়নাকে মানুষ তিনটি পর্যায়ে সাড়া দিয়ে থাকে, প্রথম পর্যায়কে ID (ইদ) বলে। এ পর্যায় অনেকটা প্রতিবর্তক (Reflexive) অর্থাৎ তাড়ানা সৃষ্টির সাথে সাথেই অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা না করে তাৎক্ষনিক চাওয়াটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রবৃত্ত হওয়া। দ্বিতীয পর্যায়কে Ego (ইগো) বলে। এ পর্যায়ে তাড়না উপলব্ধির সাথে সাথে সাড়া না দিয়ে একটু এদিক ওদিক চিন্তা করে, অতপর কাজটি করবে কি-না সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ৩য় পর্যায় Super Ego নামে পরিচিত। এ পর্যায়ে তাড়না অনুভব করার পর ঠিক-বেঠিক, উচিত-অনুচিত, সামাজিক-অসামাজিক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাড়নায় সাড়া দেয় কোন্ পর্যায়ে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বেশির ভাগ মানুষ প্রথম পর্যায়ে এবং কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় পর্যায়ে এবং তৃতীয় পর্যায়ের লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। কাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভুল কাজটিও তার কাছে স্বাভাবিক মনে হওয়ার কারণে দ্বান্দ্বিকতা, বিশৃঙ্খলা এবং অস্থিরতা বরং বেড়েই চলছে, কমছে না মোটেও।

চাহিদা যোগানের সাম্যবস্থাকে ভারসাম্য বা সাধারাণ সন্তুষ্টি অবস্থান হিসেবে মনে করা হলেও প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে চাহিদার তুলানায় যোগান অানুপাতিক হারে একটু বেশী হলেই বরং সন্তুষ্টির মাত্রা সুখকর হয় বলে আমার মনে হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে প্রায় হাজার সংখ্যক মানুষের জন্য একজন পুলিশ কাজ করে। সংগত কারণেই যোগানের অপ্রতুলতা প্রত্যাশা পূরণে সন্তোষজনক ভূমিকা পালনে কতটুকু সম্ভব তা ভেবে দেখাও দরকার।

আমরা ৯৫% মানুষ এখনও যেমন রাগ-অনুরাগ, মান-অভিমান,অভিযোগ-অনুযোগ ইত্যাদি অনুভূতির বিশ্লেষণাত্মক পার্থক্য করতে জানিনা, তেমনি পারিনা ইচ্ছা,আকাঙ্খা প্রয়োজন এবং চাহিদাকে প্রকৃত অর্থে বিভাজিত করতে। আর এরই সাথে যদি কোন আইনী বিষয়কে সস্পৃক্ত করা হয় তখন স্বল্প শিক্ষিত মানুষতো দূরের কথা বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষিত মানুষের মাথাও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আর কাজ করেনা। অবশ্য হওয়ারই কথা, কেননা শিক্ষা ব্যবস্থার কোন স্তরেই আইন সম্পর্কিত তেমন কোন শিক্ষা দেওয়া হয় না।

প্রচলিত অর্থে যা করা উচিত নয় তা করার নাম অপরাধ আর এই ধারণাটি জনসমাজে যতটা স্বীকৃত সেদিক থেকে অপরাধের অপর চরিত্র যা আইনগতভাবে করা উচিত – তা না করাও অপরাধ এ ধারনাটি সত্যিকার অর্থে ক’জন বোঝে তা একটু ভেবে দেখার প্রয়োজনও আছে ।

পুলিশ শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যাদের উপর আইন প্রয়োগ করে দুঃখজনক হলেও সত্যি বেশিরভাগ মানুষই আইন সম্পর্কে অজ্ঞ বিধায় এই অজ্ঞতাও আইনের বেআইনী ব্যবহারকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ যেমন কাউকে মারপিট করার অধিকার দেয়নি তেমনি পুলিশ আইনেও মারপিটের ব্যাপারটাকে ঢালাওভাবে কোন স্বীকৃতি দেয়নি বরং নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বরং ইংরেজি POLICE শব্দের অক্ষর বিশ্লেষণে যে গুনবাচক শব্দ গুলো পাওয়া যায় তা আর কোন পেশায় আছে বলে আমার জানা নাই।

একটু সামাজিক ব্যবস্থাপনার দিকে তাকিয়ে দেখা যেতে পারে। সমাজ বাস্তবে প্রচলিত এবং কিছুটা পরিবর্তনশীল পদ্ধতি ও কাঠামোর মধ্যে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। পরিবর্তনকে সবাই স্বাগত জানায় সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়। কিন্তু একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলে দ্বিমত পোষণ করার কোন কারন নেই যে, সামাজিক অব্যবস্থাপনাই ধীরে ধীরে জীবনবোধকে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে কেননা অশিক্ষিত,অযোগ্য,অথর্ব,ধর্নাঢ্য প্রভাব-প্রতি পত্তিশীল মেধাশূন্য মানুষ অনেক কর্মকান্ডেই নেতৃত্ব দিচ্ছে যাদের মন্দ বুদ্ধিবৃত্তির ফসলই আজকের পরিনতি; অনিয়ম, অশান্তি, অস্থিরতা, হাহাকার, এবং সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের রুদ্ধপথ।

ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা পর্যন্ত অনেকেই অশিক্ষত যারা শিক্ষাক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত হবার কথা। তাদেরও প্রভাব সচেতনতাকে এমনভাবে ধ্বংস করেছে যে শিক্ষিত মানুষ ও তাদেরকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করছে নির্দ্বিধায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথাকথিত সামাজ সেবকের নেতৃত্বে কল্যাণকামী দিক নির্দেশনা না দিয়ে বরং অর্থের ক্ষমতা অনুধাবন করে অবৈধ উপায়ে কেবলমাত্র অর্থোপার্জনের পিছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।

ফলশ্রুতিতে মানুষ অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জ্যামিতিক হারে অবৈধভাবে অর্থোপার্জনের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হচ্ছে দিনের পর দিন। অন্ধমোহে লিপ্ত এ মানুষগুলো অন্যের সর্বনাশে নিজের সাময়িক সুখে তৃপ্ত। কিন্তু উপলদ্ধির তাত্ত্বিক তথা মেধাভিত্তিক দর্শনে লক্ষ্য করলে চিত্রটি পরিষ্কার যে, সে তার পরবর্তী প্রজন্মের সর্বনাশ নিজের হাতেই করে যাচ্ছে। কলমের আঁচড়ে এমন দার্শনিক চক্ষু উন্মোচনের চেষ্টা করলে ধূর্ত এ মানুষগুলো সমাজের মানুষের কাছে নিজেদেরকে জাদুকরি হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে আর মানুষ তাদের কথা বিশ্বাসও করে কারণ টাকা থাকে ওদের হাতে।

( দুই)

সাগরসম সমস্যা সংকুল পড়ন্ত সমাজের সৌরজাগতিক বিচিত্র চরিত্রের মানুষ যেন আইনসিদ্ধ পথে চিন্তা চেতনা ও কারবার পরিচালনা করে এমন জটিল বিষয়ের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে পুলিশেল উপর। অপরাধ অনুসন্ধান, উদঘাটন, অপরাধীকে বিচারে সোপর্দ করা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের কাজ। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সকল প্রকার বৈধ আদেশ দ্রুত পালন বা কার্যকরী করা। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সকল প্রকার বৈধ পরোয়ানা জারী ও দ্রুত কার্যকরী করা, সর্বসাধারণের শান্তি রক্ষা সম্পর্কিত সংবাদ সংগ্রহ ও যথাস্থানে সে রিপোর্ট প্রদান করা। কোন অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে বা হওয়ার আশংকা থাকলে উক্ত অপরাধ প্রতিরোধ বা নিবারণ করা। সর্বসাধারণের বিরক্তিকর কার্য অর্থাৎ পাবলিক ন্যুইসেন্স নিবারণ করা, অপরাধের বৃত্তান্ত অনুসন্ধান বা উদঘাটন করা,আইনসঙ্গতভাবে গ্রেফতারযোগ্য সকল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা ইত্যাদি। পুলিশ আইনের ২২ ধারা মতে , প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তা সর্বদা কার্যরত (On Duty) বলে বিবেচিত হবে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টার সব সময়ই তার ডিউটি করার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে; অথচ-

সাপ্তাহিক সরকারী ছুটির কোন নির্দিষ্ট দিন নেই,

সবার মত অর্জিত ছুটি পূর্ণমাত্রায় ভোগ করা সম্ভব হয়না,ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোন স্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। ঝুঁকি ভাতা সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজোয্য নয়। দক্ষতার প্রশ্নে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহে ব্যয়িত খরচ প্রাপ্যতা দিয়ে মেটানো সবক্ষেত্রে সম্ভব হয়না। বাসস্থানের অপ্রতুলতার চেয়ে সরকারি ভাড়া প্রায় ক্ষেত্রেই স্হানীয় বাড়ি ভাড়ার চেয়ে বেশি অনুভূত হওয়ায় এবং অপেক্ষাকৃত কম আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তদন্তকারী অফিসার গনের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত সরঞ্জামাদির অপ্রতুলতা। জনবলের অপ্রতুলতা, হাজার লোকের বিপরীতে এক জন পুলিশের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ীর স্বল্পতা রয়েছে। দক্ষ পুলিশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের জন্য মোট বাজেটের যে পরিমান আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয় তা উল্লেখ করার মত না।

এতদ্বসত্বেও, মানবাধিকার লংঘন বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষিতে খুব বেশি আলোচ্য বিষয় যা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত শক্তি দ্বারা কৃত হয়। এমন একটি স্বাধীন বিষয়কে মাথায় রেখে পুলিশকে আইনগতভাবে দৈনন্দিন কাজ হিসেবে যা করতে হয় তা হল,

১। ট্রাফিক ডিউটি করা। ঝুঁকিপূর্নও বটে।

২। রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ন নাইট প্যাট্রোল করা।

৩। ভিভিআইপি, ভিআইপি ডিউটি করা-যা খুব স্পর্শকাতর, রাত জেগে গার্ড ডিউটি করা প্রকৃতপক্ষে কষ্টকর কাজ।

৪। মানি এসকর্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণকাজ,

৫। বল প্রয়াগ করা; আইন সংগত ভাবে, বেশ কঠিন কাজ।

৬। গ্রেফতার করা; বুদ্ধিবৃত্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ,

৭। আদালতে সোপর্দ করা; ২৪ ঘন্টার মধ্যে।

৮। অস্ত্রবহন ও ব্যবহার করা, প্রশিক্ষণে এক থেকে দুই বার মাত্র গুলি করার সুযোগ রয়েছে ।

৯। দেহতল্লাশী করা ;আইনসিদ্ধ উপায়ে

১০। যানবাহন ও গৃহতল্লাশী করা। আইন সিদ্ধ ভাবে।

১১। নিয়মিত অফিসকার্য সম্পাদন করা, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ইত্যাদি।

এসব কিছুই একটা আইন সীমার মধ্যে থেকে করতে হয়। সীমালংঘিত হলেই বিপদ অনিবার্য। আর দুর্নাম সে তো কোন ব্যক্তি বিশেষের নয় সমগ্র পুলিশের উপর বর্তায় এবং একজনের ভুলের জন্য অন্যদের পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদাও ক্ষুন্ন হয় যেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে দ্বিধাবোধ করে না পুলিশের প্রতিবেশী এবং সমাজ। নাগরিক হিসেবে ইতিহাস ঐতিহ্য ও দেশপ্রেম বিবেচনা করে পুলিশ রুটিন কাজের বাইরেও কিছু কাজ করে থাকে যেমন সচেতনতা বৃদ্ধি, জনসংখ্যা, নারী নির্যাতন, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য, প্রাথমিক চিকিৎসা, মানবাধিকার, শিশু অধিকার, শিশু ও নারী পাচার রোধ, কিশোর অপরাধ, ড্রাগ আসক্তি ইত্যাদি বিষয়ক বিশেষায়িত কাজ গুলো। এছাড়াও সামাজিক বনায়ন, সামাজিক সম্প্রীতি, সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, দেশীয় সংস্কৃতির উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রনের মত অসংখ্য কাজ। এর বাইরেও জাতীয় যে কোন দুর্য্যোগ মোকাবেলায় যেমনটা করোনা মোকাবেলায় পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্দ্বিধায় এগিয়ে চলছে। উপায় নেই করতেই হবে কারন ইতিহাস ঐতিহ্য ও দেশপ্রেমে পুলিশের রয়েছে গৌরবাজ্জ্বল ভূমিকা সেই সাথে পুলিশের উপর গণমানুষের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। আবার প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যম দ্বারা, অনানুষ্ঠাকি গ্রুপ ও সংস্থার মাধ্যমে, সাহিত্য, সাইন্স ফিকশন, গল্প-উপন্যাস লেখনির দ্বারা, জনসমাবেশ থেকে এবং পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও আর্ন্তজাতিক প্রতিক্রিয়া থেকেও পুলিশের নানাবিধ নিত্য নতুন কাজ সম্পাদনে মনযোগি হতে হয়। তদুপরি বর্তমান সাংবিধানিক পদ্ধতিতে রাজনীতিবিদরা হলো দেশ ও জাতির কর্ণধার এবং তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি জনগনের প্রত্যাশাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা পূরনে সর্বত্র সর্বাবস্থায় সর্বপ্রকার সমস্যায় নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে পুলিশকে কাজ করতে হয়। জঙ্গিবাদী, চিহ্নিত ও প্রকৃত সন্ত্রাসীদের ত্রাসের রাজত্ব থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে মানুষের এই প্রত্যাশা গুলো খুবই মৌলিক কোনভাবেই তা অমূলক নয়। কিন্তু পুলিশের অসুবিধা, সীমাবদ্ধতা, বিচারের ক্ষমতাহীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের ভাবনার কোন বিষয় বলে বিবেচিত হয়নি কখনও বরং চাওয়া মাত্র আইনসংগত কিংবা বহির্ভূত পন্থায় কাজটি করতে হবে এটাই বদ্ধমুল ধারণা।

কিন্তু কেউ কি এভাবে একটু ভেবে দেখে কখনো যে, ভাল কাজ করতে গেলেও পুলিশের বিড়ম্বনার শেষ নেই। ধরুণ-

এক. একজন হেরোইন আসক্তকে অপরাধস্থল থেকে ধরে আনা হল। ২৪ ঘন্টার মধ্য তাকে বিচারে সোপর্দ করতে হবে আর এরই মধ্যে তার নেশা প্রত্যাহারের লক্ষণ(Withdrawal Symptom) দেখা দিলে তাকে হেরোইন দেবার মত অবৈধ কাজ পুলিশের করতে হবে কেননা পুলিশ হেফাজতে সে মারা গেলে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা পুলিশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। সেক্ষেত্রে পুলিশের বিপদ অনিবার্য।

দুই. কোন অপরাধ সংঘটন হতে পারে জেনে পুলিশ একটি বাড়ীর সামনে পায়তারা করতে লাগল। এ অবস্থায় বাড়ীর মালিক ভাবল পুলিশ ঘোরাঘুরিতে তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। সে পুলিশকে চলে যেতে বাধ্য করল। কিছু সময় পরে যথারীতি একটি দূর্ঘটনা ঘটল, বাড়ীর মালিক সাংবাদিকদের জানাল পুলিশের যোগসাযোশে দুষ্কৃতিকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এতক্ষণে প্রচার হয়ে মানুষের মধ্যে একটি ধারনার জন্ম নিল। পুলিশ হল খলনায়ক সকলের কাছে। অতপর ভূক্ত ভোগি ছাড়া কেউ জানেনা।

জটিল ও বিচিত্র মননের প্রায় ২০ কোটি মানুষ, অসংখ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা পুলিশের কাছে অনেক বেশি এবং এতটাই আবেগঘন যেন, নদীর প্রবাহিত স্রোত দিয়ে ধেয়ে আসা সাগর জোয়ারের স্রোতের গতিকে বিপরীত দিকে চালিত করে অনুর্বর মাটিতে পলি ফেলে উর্বর করার মত। তবে এত টুকু বলা যেতে পারে বর্তমান বাংলাদেশ পুলিশ এখন অাগের চেয়ে অনেক বেশি মানবীক, গতিশীল ও দুর্বার এবং গণমানুষের চাওয়া পুরনে বদ্ধপরিকর। ২০ কোটি মানুষের চাহিদা পূরনে পুলিশ সদস্য সর্বদা প্রস্তুত। জীবনকে উৎসর্গ করে পুলিশ মানবতার কল্যাণে জাতীর এই দুঃসময়ে ডাক্তারদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় নিরলস যুদ্ধ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে K‡ivbvq AvµvšÍ মৃত ব্যাক্তির জানাজা এবং কবর খনন ও দাফনের কাজ মানবিক কারণেই করতে হচ্ছে। আবার লাঠি হাতে রাস্তায় রোদে পুড়ে মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে ফেরানোর মত অপ্রিয় কাজ ও করতে হচ্ছে পুলিশকে। আবার মানবীক কারনে অসহায়দের মাঝে রাতের আঁধারে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দিতে হচ্ছে কিন্তু পুলিশকেই। যদিও সে ছবি প্রচারে আসার বিষয়টা খুব একটা চোখে পড়েনা।

পরিশেষে সমবেত অনেকের মত একজন অনুজ সদস্য হিসেবে আমিও দৃঢ়চিত্তে আশাবাদী গণমানুষের প্রত্যাশা পুরনে বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান বিজ্ঞান মনস্ক ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) স্যারের গতিশীল নেতৃত্বে চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকট যথাযথভাবে মোকাবিলা ও প্রতিরোধ সহ সকল চ্যালেঞ্জ পূরণ করে বাংলাদেশ পুলিশ গণমানুষের সিন্ধুসম প্রত্যাশা ও আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়ন করবে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এবং আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ মানবতার জয়গান গাইবে। পুলিশ জনগণের আশির্বাদ, এই সত্যকে অর্জনের ক্ষেত্রে নাগরিক ভাবনায় পরিবর্তন এনে আরও খানিকটা মানবিক হওয়ার চেষ্টা আমাদের সকলকেই আব্যাহত রাখতে হবে যাতে করে পুলিশ ভালো কাজে অনুপ্রেরণা লাভ করে। পুলিশের বিন্দুসম প্রত্যাশা আমারা সবাই মিলে

উপহার দেবো সেটিই সত্য হোক ; হারিয়ে না যাক সিন্ধুর বিস্তৃত সীমানার কোন অচেনা অজানা অতল গহ্বরে!

লেখক – পুলিশ সুপার, গীতিকবি, কন্ঠশিল্পী ও প্রবন্ধকার।