এম এ কাদির চৌধুরী ফারহান: বাংলাদেশের চা শিল্পাঞ্চলের মানুষজন সবচেয়ে বেশী অসচেতন। চা বাগানগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার নেই কোন সু-ব্যবস্থা। তাদের বসত বাড়ির অবস্থাও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নেই তাদের চলাচল।
সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে সারা দেশের কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার বন্ধ হলেও ছুটি নেই চা বাগান সমূহে। ফলে রীতিমত করোনা ঝুঁকিতে প্রতিদিন দেশের ২৩০টি চা বাগানে কাজ করছেন দেড় লক্ষাধিক চা শ্রমিক, করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে ছুটির দাবিতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা নিজেরাই ছুটিতে চলে গিয়েছিল। পরবর্তীতে গত ১১ এপ্রিল শনিবার সকাল ৯টায় একযোগে ২৩০টি চা বাগানে চা শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে সাধারণ ছুটির দাবিতে ১০ মিনিটের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ কর্মসূচি শেষে সম্প্রতি বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (১৫ এপ্রিল) করোনাভাইরাস ঝুঁকির হাত থেকে চা শ্রমিকদের রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে লিখিত একটি আবেদন প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকর্তার ও সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরীসহ কেন্দ্রীয় কার্যকরি কিমিটর নেতৃবৃন্দ এ আবেদনে স্বাক্ষর করেন। চা শ্রমিকদের ছুটি না দিলে চা শ্রমিক ইউনিয়ন পরবর্তী সভা করে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
চা শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতরাম বীন বলেন, যেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে সারা দেশ এখন করোনা ঝুঁকিতে। সেখানে দেড় লক্ষাধিক চা শ্রমিকদের ঝুঁকির মাঝে রেখে তাদের ছুটি বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। তাদের কর্মস্থল পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলা ভূমিতে। সেখানে স্বাস্থ্য সেবার কোন সুবিধা নেই। তারা কোন প্রকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছে না। বিশেষ করে উত্তোলিত চা পাতা ওজন দিয়ে ট্রাকে তোলার সময় গাদাগাদি করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। তাছাড়া দুপুরের মধ্যাহ্ন্য ভোজের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে একত্রে বসে খাবার গ্রহন করেন। ফলে তাদের মাঝে করোনা ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী রয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিযনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী শনিবার দুপুরে বলেন, সারা দেশের ২৩০টি চা বাগানের নিবন্ধিত ও অস্থায়ী মিলিয়ে দেড় লক্ষাধিক চা শ্রমিক রয়েছে।
এই দেড় লক্ষাধিক চা শ্রমিক ও তাদের পরিবার এখন সম্পূর্ণরুপে করোনা ঝুঁকিতে আছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সের সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক বলেছিলেন এ বিভাগের চার জেলা করোনামুক্ত। আর চা বাগানেও করোনার শঙ্কা নেই। তবে বর্তমান অবস্থায় সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় করোনা সংক্রামক রোগী রয়েছে এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যুবরণও করেছে। এখন পুরো বিভাগ লকডাউনে আছে। তার পরও চা বাগানের শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়নি। তাই চা শ্রমিকদের করোনা ঝুকি থেকে রক্ষা করে তাদেরকে মানবিক বিবেচনায় সাধারণ ছুটি দানে নির্দেশনা দিতে চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে বুধবার প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর পরও চা শ্রমিকদের ছুটি না দিলে চা শ্রমিক ইউনিয়ন পরবর্তী সভা করে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি ঘোষণা দেবে।