করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্প আয়ের অসহায় ও দুস্থ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের তালিকা নিয়ে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন ও মেম্বারদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এতে ওই ইউনিয়নের করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো যথাসময়ে সরকারি সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামানের সরাসরি হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার এলাকায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান মেম্বারদের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে বাধা প্রদানের অভিযোগ তুলে ভাঙ্গুড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় ও প্রত্যন্ত খানমরিচ ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। এই ইউনিয়নের অর্ধেক পরিবার দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এসব দরিদ্র পরিবারের কর্মক্ষম পুরুষরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনমজুরের কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণের যোগান দেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিরা কাজ না পেয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে বসে থাকছেন। এতে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।
এ অবস্থায় ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রশাসন প্রথম পর্যায়ে এই ইউনিয়নে ২৮৩ জন স্বল্পআয়ের অসহায় দুস্থ পরিবারের তালিকা চান ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান কোনো মেম্বারকে না জানিয়ে গোপনে তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠায়। এই তালিকায় মেম্বারদের স্বাক্ষর না থাকায় তা ফেরত পাঠায় উপজেলা প্রশাসন। পরে চেয়ারম্যান ইউনিয়নের প্রত্যেক মেম্বারের কাছ থেকে দশটি পরিবারের তালিকা চান।
ইউনিয়নের অর্ধেক মানুষ দরিদ্র হওয়ায় মেম্বাররা উপজেলা প্রশাসনের কাছে সহায়তা পাওয়া পরিবারের তালিকা বাড়ানোর অনুরোধ জানান। তখন উপজেলা প্রশাসন ২৮৩ থেকে ৩৫০ টি পরিবারের তালিকা পাঠাতে বলেন। তখন মেম্বাররা প্রতি ওয়ার্ড থেকে ২০টি পরিবারের তালিকা চেয়ারম্যানের কাছে প্রদান করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান ওই ২০ জনের তালিকা থেকে ১০ জনের নাম কেটে দিয়ে নিজের পছন্দমত পরিবারের নাম তালিকাভুক্ত করেন।
এ নিয়ে গত বুধবার দিনভর দফায় দফায় চেয়ারম্যানের সাথে মেম্বারদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বিকালে চেয়ারম্যানের ছেলে স্বপন ও তার লোকজনের সাথে মেম্বারদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান বুধবার রাতে ভাঙ্গুড়া থানায় ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে বাধাদানের অভিযোগে তুলে একটি মামলা দায়ের করেন। উল্লেখ্য, তালিকাভুক্ত প্রত্যেক পরিবার ১০ কেজি চাল, তেল ও ডাল পাবেন।
এদিকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বন্দ্বের কারণে ত্রাণ বিতরণে দেরি হওয়ায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন। পরে আজ বৃহস্পতিবার তার নির্দেশে চেয়ারম্যানের করা তালিকা অনুসারে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেন। তবে ত্রাণ প্রাপ্তদের তালিকা তৈরিতে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা সে বিষয়েও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেখভালের নির্দেশ দেন ইউএনও।
খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে স্বল্পআয়ের অসহায় দুস্থ পরিবারকে তালিকাভুক্ত না করে নিজের পছন্দমত ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করছেন। এমনকি মেম্বারদের তৈরি করা তালিকাও তিনি মানছেন না। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যানের ছেলেসহ তার লোকজন মেম্বারদেরকে হুমকি দিচ্ছেন। এখন তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করে মেম্বারদেরকে দাবিয়ে রাখতে চাচ্ছেন।
খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান বলেন, ‘মেম্বারদের বাধার কারণে সময়মতো অসহায় দুস্থদের মাঝে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা প্রদান করা যায়নি। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতে আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে মেম্বারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।’
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মাসুদ রানা জানান, সরকারিভাবে ত্রাণ প্রদানকারীদের তালিকা প্রস্তুত ও বিতরণে বাধা প্রদান করার অভিযোগে মেম্বারদের বিরুদ্ধে খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বন্দ্বের অবসান না ঘটলেও চেয়ারম্যানের দেয়া তালিকা অনুসারে বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে ওই ইউনিয়নের সাড়ে তিনশ পরিবারের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় যদি কোনরকম অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে পরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আরো ৫০০ পরিবারের তালিকা দ্রুত তৈরি করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।