নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা হতদরিদ্র দিন মজুর জহির উদ্দিনের দিন কাটে একটি
মাটির ঘরে। বয়সের ভারে কিছুটা কাতর হলেও শারিরিক শ্রম দিয়ে টাকাপয়সা উর্পাজনের ক্ষমতা প্রায় শুন্যের ঘরে। তার পরেও বিরল ভালোবাসার টানে ভালো কাজ করতে গিয়ে জীবণে তার অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ঠিক এমই একজন মানুষ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আনালিয়া খলিসাকুড়ি গ্রামের মৃত-মছির উদ্দিনের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানকে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা-ভালোবাসার কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত টানা প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ মাথায় তেল দেয়নি। চুলে চিরুনী লাগায়নি। এমনকি চুল ও কাটেননি তিনি। তার শয়ন ঘরে চার দিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি আর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসূচির ব্যানার পোস্টার দিয়ে ঘর সাজিয়ে রেখেছেন।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-স্বাস্থ্য কামনা করে সাধ্য মতো মাঝে মধ্যেই দোয়া মাহফিল করেন জহির উদ্দিন। তার
আপসোস মুক্তিযাদ্ধা হয়েও সংশ্লিীষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের সেলামী দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা অধ্যবধি পাননি তিনি।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের আনালিয়া খলিসাকুড়ি গ্রামের মৃত মছির উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিন (৬৭)
জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষনে উদ্বদ্ধ হয়ে দেশ মার্তৃকাকে শত্রু মুক্ত করার লক্ষে ভারতের শিলীগুড়ি ও মধুপুর ক্যাম্পে প্রায়
৩মাস প্রশিক্ষন শেষে তার যুদ্ধকালিন ক্যাম্প কমান্ডা উপজেলার সিম্বা গ্রামের মৃত-তসলিম উদ্দিনের সাথে যোগ দেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাক-বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন তারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন সোনার বাংলা গড়ার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করছিলো ঠিক সেই সময় ১৯৭৫সালে ১৫আগষ্ট কিছু উশৃঙ্খল বিপদগামী রাজাকার আলবদরের মদদ পুষ্ট গুটি কয়েক সেনা সদস্যরা
বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে। জাতির জনকের হত্যা খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানার পর বিরল ভালোবাসার টানে রাগে ক্ষোভে প্রতিজ্ঞা
করেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের এবং রাজাকার আলবদর আল সামসদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত মাথায় তেল চিরুনী না দেওয়া এবং
চুল আর কাটবো না। সে অপেক্ষায় আছেন প্রায় ৪৫ বছর। উপজেলার মুক্তি যোদ্ধাদের তালিকার মধ্যে ক্রমিক নং ৫৯ জহির উদ্দিনের নাম
থাকলেও রহস্যজনক কারণে সরকারি ভাবে কোন সুযোগ সুবিধা তার ভাগ্যে জোটেনি। অথচ জেলা সদরে গত ২০০০ সালে ৬মার্চে মুক্তিযোদের মিলন মেলা অনুষ্ঠানে নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ৭১ নওগাঁ জেলা শাখা থেকে তাকে দাওয়াত পত্র দেন। কয়েক দফায় তালিকাভুক্তের আবেদন করেও মুক্তিযোদ্ধা অন্তভূক্তির তালিকায় তার নাম স্থান পায়নি। নিজের পৈত্রিক কোনো জমাজমি না থাকলেও শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামায় থাকার সুবাদে তার শ্বশুর এক খন্ড জমি দিলে সেখানে
মাটির দেওয়াল তুলে কোনো রকমে রাত কাটাচ্ছেন। যে ঘরে বসবাস করছেন সেটাও যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
ছোটো বেলা থেকে জহির উদ্দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুপ্রানিত। যেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কিংবা তার মিটিং মিছিল আলোচনা সেখানেই হাজির হতেন তিনি। যে কেউ তাকে দেখলেই বুঝতে পারেন তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবেদিত প্রাণ। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সেই ৪৫বছর আগের চুল না কাটার কারণে এখন জট হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরল ভালোবাসার টানে তার খুনিদের যতদিন ফাঁসির রায় কার্যকর না হবে ততদিন মাথায় তেল দিবেন না, চুলে চিরুনি লাগাবেন না, এবং মাথার চুল ও কাটবেন না এই তার প্রতিজ্ঞা।
প্রতিবেশি লুৎফর রহমান জানান, জহির উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর অন্ধ ভক্ত। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকে সে আজ পর্যন্ত মাথায় তেল ও চিরুনি লাগায়না। এমনকি মাথার চুল না কাটার কারণে চুলে জটা ধরেছে।
জহির উদ্দিনের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান জানান, সে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধকালিন
সময়ে সে আমার সঙ্গেই ছিলো। সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও রহস্য জনক কারণে এখন পর্যন্ত তার কপালে সরকারি সুযোগ সুবিধা জোটেনি। সে অথিক অভাব অনাঠনের মধে অনেক কষ্টে আছে।
এব্যাপারে রাণীনগর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার
এব্যাপারে রাণীনগর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে মুঠো ফোনে
যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্ত্য করেননি। #