কবি শরদিন্দু কর্মকার নারী বন্দনা করতে গিযে লিখেছেন “ মানুষ কেন বলে মোদের/নারীর নিজস্ব নাই কিছু/ আমি তো দেখি জগৎ চলে/নারীর
পিছু পিছু। বাপের ঘরের লক্ষী আমি/স্বামীর ঘরে অন্নপূর্ণা/ছেলের ঘরে জননী আমি/আমি ছাড়া সংসার অসম্পূর্ণা।
আবার আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার নারী কবিতার মাধ্যমে আমাদের সমাজে নারীর কতটুকু অবদান তার সম্পূর্ণ ধারনা
দিয়েছেন। কৃষি সভ্যতার সূচনা নারীর হাতেই হয়েছিল। সেই থেই শুরু আজ-অবধি। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান ভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে। বিশ্বের সব ধর্মই নারীকে বিশেষ মর্যাদা
দিয়েছে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখানো নারীরা তেমন মর্যাদা পাচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান সমাজে এই বিভেদের জাল ছিঁড়ে কেউ কেউ বেরিয়ে এসেছেন সামনে, পথে। সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও
এখন দেশের বিশেষ স্থানে তাদের কর্ম দক্ষতার মাধ্যমে হচ্ছেন অনন্য। তিনি হচ্ছেন অন্য আর দশটা নারীর প্রেরণা।
আজ এমন একজন নারীর কথা বলছি যার পুরো নাম সুলতানা সাঈদা শিল্পী। ১৯৭৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী গাজীপুর সদর উপজেলার হাজীবাগ এ
জন্ম গ্রহন করেন। পিতা আলহাজ¦ মোঃ শাহজাহান একজন প্রকৌশলী এবং মাতা আলহাজ¦ রোকেয়া বেগম গৃহিনী। এ দম্পতির প্রথম সন্তান সুলতানা সাঈদা শিল্পী পাবনার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের কুয়াবাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
১৯৯৬ সালে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহঃশিক্ষিকা হিসাবে শুরু হয় তার কর্ম জীবন। একাধারে একজন কবি ও আবৃত্তিকার। তিনি রাজশাহী বিভাগের গার্লস
ইন স্কাউটিং বিভাগের আঞ্চলিক উপ কমিশনার। মেসেঞ্জার অব পিস এর লোকাল কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব ও পালন করছেন তিনি। মাত্র চার জন
ব্যক্তি স্কাউটের এ আন্তর্জাতিক ব্যাচ অর্জন করেছেন এবং এর মধ্যে এক মাত্র নারী তিনি। স্কাউটিং ক্যাম্প এর সুবাদে তিনি এ পর্যন্ত
ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত, মায়ানমার, ভুটান, নেপাল, সিংগাপুর, ফিলিপাইন এবং হংকংসহ ১৭ টি দেশ ভ্রমন
করেছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক দশ দিনের শিক্ষা সফরে ফিলিপাইন গমন করেন।
ইতিমধ্যে তার একক কাব্য গ্রন্থ ‘হিরের টুকরো বউ’, ‘ফুলের সাথে পাতার সাথে’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় ফুল’ গবেষণা গ্রন্থ ‘সন্নাসী
রাজা’ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘শরতের মেঘলা আকাশ’, ‘দু নয়নের সপ্নীল ভাবনা এবং ‘সুবর্ণ রেখার আল্পনা’ নামক যৌথ কাব্য গ্রন্থে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। লেখা লেখিতে বিশেষ অবদান রাখায়
‘বাংলাদেশ কবিতা সংসদ সাহিত্য পদক’, ‘কাংগাল হরিনাথ সাহিত্য সম্মাননা’, ‘খান মোঃ মঈনুদ্দিন সাহিত্য পদক’ এবং ‘কাব্য শ্রেয় সাহিত্য পদকে’ ভূষিত হয়েছেন তিনি।নারী প্রসঙ্গে আলাপ কালে তিনি বলেন, “নারী অদম্য শক্তির আঁধার। নারী
সর্ব জয়া। নারী শুধু নারী না, সে মেয়ে, মা, বোন, স্ত্রী। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রাখছে নারী। নারী তার নিজ দিপ্তীতেই উদ্দীপ্ত। তাই প্রতিটি নারী এক একটি প্রতিষ্ঠান। নারী
মায়াময়ী, ব্যবস্থাপক, অর্থনীতিবিদ এবং প্রতিবিধানকারী। কি নামে ডাকা যায় না নারীকে ? তাই আমার বিশ^াস শুধু মাত্র আত্মবিশ^াসে
বলিয়ান হয়ে প্রতিটি নারী পারে নিজের নিজের আলোকে পৃথিবীকে আলোকিত করতে।”
লেখক- সাংবাদিক, গীতিকার বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহী।