পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কলেজের উন্নয়ন সহ বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি ছাড়াও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এমনকি এবছর কলেজের নৈশপ্রহরীর বেতনের টাকাও আদায় করা হয় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে। শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ফি বন্ধের দাবিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের নিয়ম মেনেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে। অথচ একই শহরের সরকারি ভাঙ্গুড়া মডেল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শুধুমাত্র শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ফি আদায় করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয় এ মাসের ১৫ তারিখ থেকে। এরপর কলেজের প্রায় সাড়ে ৬০০ শিক্ষার্থীর নামে কলেজ নির্ধারিত ফির তালিকা কলেজের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেয়া হয়। এতে একটি তালিকায় শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪৭৫ টাকা, মানবিক বিভাগের জন্য ২১৯৫ টাকা ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য ২০৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া নোটিশ বোর্ডে তিনটি বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি তালিকা দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নামে কলেজ ব্যবস্থাপনার জন্য ৫০ টাকা, ছাত্র সংসদের জন্য ২৫ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ৩০ টাকা, সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য ৫০ টাকা, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়ার জন্য ৪০ টাকা, ম্যাগাজিনের জন্য ৩০ টাকা, গবেষণাগারের জন্য ১০০ টাকা, উন্নয়ন ফি ২০০ টাকা, লাইব্রেরীর জন্য ২৫ টাকা, দরিদ্র তহবিলের জন্য ২০ টাকা, মেডিকেলের জন্য ২০ টাকা, আইসিটি খাতে ২০ টাকা, বিজ্ঞান ক্লাবের জন্য ২০ টাকা, রোভারদের জন্য ২৫ টাকা, রেড ক্রিসেন্টের জন্য ১৫ টাকা ও নৈশ প্রহরীর জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে এই তালিকা অনুসারে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী ফরম পূরণের কাজ সম্পন্ন করেছে। বাকি শিক্ষার্থীরা এখনো ফরম পূরণ না করে অতিরিক্ত ফি কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সূত্র আরও জানায়, সরকারি কলেজের যে কোনো খাত থেকে উপার্জিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। সেই টাকা আর কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের কোনো উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত অর্থ কলেজের উন্নয়নে ব্যয় করতে চাইলে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া যাবে না। কিন্তু টাকা জমা না দিলে সেটিও আরেক ধরনের অপরাধ। এতে উন্নয়নের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
মানবিক বিভাগের আতিক হাসান ও ব্যবসায়ী শিক্ষা বিভাগের আশিক ইকবাল আকাশ সহ কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, জেলার অন্যান্য উপজেলার সরকারি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শুধুমাত্র বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি নেয়া হয়েছে। কিন্তু হাজি জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজে বোর্ডের নির্ধারিত ফি ছাড়াও উন্নয়নের নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭৪৫ টাকা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত ফি কমাতে বারবার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ কারোর অনুরোধই কর্ণপাত করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা, গবেষণাগার, বিজ্ঞান ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট ও সাহিত্য চর্চার সুবিধা তেমন না থাকলেও ফরম পূরণে ওইসব খাত দেখিয়ে ফি আদায় করা হয়েছে। এমনকি এবছর কলেজের নৈশপ্রহরীর বেতনটাও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে।
সরকারি ভাঙ্গুড়া মডেল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত ফি আদায়ের সুযোগ নেই। তাই তার কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শুধুমাত্র শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ফি আদায় করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ভাঙ্গুরা হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম মেনে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু অর্থ আদায় করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কলেজের উন্নয়নে এসব অর্থ ব্যয় করা হবে। তাই শিক্ষার্থীরা ফি কমানোর আবেদন করলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
এ বিষয়ে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।