নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউপি চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন ভুট্টুর বিরুদ্ধে বৃচাপিলা গ্রামের স্থানীয় ৯ কৃষক পরিবারের ১৬ বিঘা তিনফসলী জমি জোরপূবর্ক জোরপূর্বক দখলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষক পরিবারগুলোর অভিযোগ, চেয়ারম্যান তাঁর পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী জমিতে থাকার ৩০০ কলাগাছ কেটে এবং পাঁচ বিঘা জমির পাকাধান কাটতে না দিয়ে তার উপরে বালি ফেলে দখলের কাজ দ্রুতগতিতে চালাচ্ছে ।প্রতিবাদ করতে গেলেই মামলা-হামলার শিকার হচ্ছে কৃষকরা। শেষ সম্বল চাষাবাদের জমিটুকু হারানোর ফলে এখন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সদস্যদের মাঝে চলছে বোবা কান্না। হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেকেই। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ।
স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষক ও জমির মালিকরা অভিযোগ করে জানান, উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের বৃচাপিলা গ্রামের সাধারণ কৃষক গিয়াস উদ্দীন,মেজবান হোসেন,আব্দুল জলিল,নূরুল ইসলাম, নান্নু মিয়া, কাজিম উদ্দীন ,আব্দুর রশীদ ও আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭৪ সালে স্থানীয় দিনু রায়,মিনু রায় ,প্রাণবন্ধু,সুদেন রায়ের কাছ থেকে দলিলমূলে ১৬ বিঘা তিনফসলি জমি ক্রয় করে চাষাবাদ করে আসছিল । প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খাজনা খারিজও করে আসছেন কৃষকরা । হঠাৎ করে জমিটির উপর নজর পরে চেয়ারম্যানের ।কৃষকদের ডেকে ৬ বিঘা জমি তাঁর নামে লিখে দিতে বলেন । কৃষকরা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার নামে এই নিরীহ কৃষকদের কৃষি ও ফসলি জমি অবৈধভাবে বালু ভরাট করা শুরু করে । চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন ভুট্ট এবং চাপিলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নিয়োজিত সন্ত্রাসী বাহিনী ৬ বিঘা জমির পাকা ধান কৃষকদের কাটতে না দিয়ে দখলে নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে পাইপ লাগিয়ে বালি ফেলা হচ্ছে । কৃষকদের লাগানো ৩০০কলাগাছ কেটে ফেলা হয়েছে । বিগত ৪০ বছর ধরে খাজনা খারিজ করে উক্ত জমিতে চাষাবাদ করে আসছিল পরিবার গুলো ।বৃ চাপিলা গ্রামের আরোও অনেক কৃষকের জমি অবৈধভাবে জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও জমির মালিকরা অভিযোগ করেন। ইতোমধ্যে বেশ ক’জন কৃষকের জমি দখল করা হয়েছে। তাদের কজনকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চেয়ারম্যান । এখানে অনেকেই জমি, বসত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে ।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি। ক্ষতিগ্রস্থরা শুধু বলেছেন, দেখে যান কত কড় ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের লাগানো পাকা ধানের জমিতে ফসলের উপর ড্রেজার পাইপ দিয়ে ৮/১০ ফুট উচু করে বালু ফেলছে।
বৃচাপিলা গ্রামের ক‚ষক গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমার ৯২ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলাম। তারা জোর করে আমার ফসলের উপর বালু ভরাট করে ফেলেছে। আমি বাঁধা দিলে তারা মামলা হামলার হুমকি দেয়।
প্রতিবন্ধী কৃষক আব্দুর রশীদ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তাদের জমি স্থানীয় চেয়অরম্যান এবং তার বাহিনীর লোক জোর করে ভরাট করে ফেলছে। জমিতে থাকা পাঁচ বিঘা পাকা ধানও আমাদের কাটতে দেয়া হয়ান । চেয়ারম্যানের বিরূদ্ধে কোন কথা বলে এ গ্রামে কেউ থাকতে পারবে না। তাই কারো কোন অভিযোগ করার সুযোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী জানান,চেয়ারম্যান উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বিলের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে কৃষকদের তিনফসলী জমিতে বালিভরাট করছে। এই অবৈধ ভরাটের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যানের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী কাজেম উদ্দীন নামের এক কৃষককে মারপিট করেছে ।এ নিয়ে কেউ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না । স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গিয়ে ভুক্তভোগীরা কোন প্রতিকার পাননি। জবর দখলের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় তাদের অবৈধ কর্ম কান্ডবন্ধ করে সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনুরোধ জানান ভুক্তভোগী জমির মালিক ও কৃষকরা। এখনই এই সকল অবৈধ কর্মকা- বন্ধ করা না হলে গণ আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তাই অবিলম্বে অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ করার জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।
চেয়ারম্যান ভুট্টু বলেন ,এটা বন্দোবস্তের জমি ।হাতবদল করার কারণে তাদের লীজ বাতিল হয়েছে । সরকারের তরফ থেকে এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে । তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরীতে অবৈধভাবে কারো জমি দখল কিংবা বালু ভরাট করেনি। খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতেই বালু ভরাট কাজ চলছে। একটি পক্ষ আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) নাহিদ হোসেন খান বলেন,জায়গাটি বরেÍাবস্তের জমি । বন্তোবস্ত বাতিল হওয়ায় জায়গাটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষকদের জমি অবৈধভাবে দখল করতে দেয়া হবে না। কৃষি ও ফসলি জমি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাটোর ৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কৃষকদের কৃষি ও ফসলি জমি অবৈধভাবে দখল করার ক্ষমতা কারো নেই। এটা প্রকৃত খাসজমি । এখানে সরকার দুইশ পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করছে ।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ জানান, জায়গাটি সরকারের । তাই বরাদ্দ বাতিল হওয়ায় সেখানে আশ্রয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে । এখানে দখলের কিছু নেই ।