আজম আলী। বয়স ২৮ বছর। বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে। প্রায় পাঁচ বছর আগে বাবা আলতাব আলীর মৃত্যু হয়। এরপর শারীরিক এই প্রতিবন্ধী গ্রিলের ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। প্রায় চার বছর ধরে আজম আলীর উপার্জনেই চলছে তাঁর পরিবার।শারীরিক প্রতিবন্ধিত্বও তাঁর এই কাজে বাধা হতে পারেনি। পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোর শক্তি-সামর্থ্য নেই তাঁর। তবুও তিনি থেমে নেই। জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে সব বাধা-বিপত্তি পেছনে ফেলে বেছে নিয়েছেন জটিল ও কঠিন এই কর্মজীবন। নিজের বউ-বাচ্চা না থাকলেও মা, তিন ভাই ও দুই বোন রয়েছে। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নকিখালি বাজারের ইউসুফ আলীর ওয়ার্কশপে গিয়ে কাজ করেন তিনি। মাসে বেতন পান তিন হাজার টাকা।আজম আলী জানান, জন্মের পর থেকেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁর দুটি পা অচল। বাবা মারা যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে এই কাজে যোগ দেন। প্রতিদিন সকালে কাজে যান, ফেরেন বিকেলে। প্রতিবন্ধী ভাতা আর এই কাজের টাকায় কোনোমতে সংসার চলে। মাঝেমধ্যে শরীর খারাপ থাকলে কাজ করতে পারেন না। তখন সংসারে সমস্যা দেখা দেয়। নিজের একটি দোকান থাকলে সুবিধা হতো। কিন্তু তাঁর সেই সামর্থ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন পরিশ্রমী এই মানুষটি। সদিচ্ছা থাকলে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে তার দৃষ্টান্ত দুটি পা অচল প্রতিবন্ধী আজম আলী।আজম আলী আরো জানান, তাঁর মতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত। তবে তিনি সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চান না। নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চান এই সোনার বাংলাদেশে। তবে এলাকার বিত্তবানদের কাছ থেকে বা সরকারি কোনো সহায়তা পেলে তিনি নিজে ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান।স্থানীয় নকিখালি বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ কাওছার খান বলেন, আজম আলী প্রতিবন্ধী হলেও সমাজের বোঝা নয়। সে নিজে কাজ করে সংসার চালায়। প্রতিদিন তাঁকে কর্মস্থলে যথাসময়ে আসতে দেখা যায়। কাজের প্রতি তার কোনো অবহেলা নেই।উপজেলার রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা তাঁকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, আজম আলী চাইলে তাকে সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।