নাটোর প্রতিনিধি–দুই বিঘা জমি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
লেখা একটি জনপ্রিয় ব্যঙ্গাত্মক কবিতা। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কথা ও
কাহিনী’ নামক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা। বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণীবিভেদ
আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতাটি
লিখেছেন। এই কবিতায় গরীব শ্রেণীর অসহায়ত্বের দিক দেখানো হয়েছে । এখানে একটি
লোকের জমি জোর করে জমিদার এর দখলে নেওয়ার ঘটনা অতি নিপুণভাবে কবিতার
ছন্দে বলা হয়েছে । গরিব
কৃষক উপেন একজন প্রান্তিক কৃষক। তার যে জমিজমা ছিল তার মধ্যে দুই বিঘা জমি
ছাড়া সবই ঋণের দায়ে তাকে হারাতে হয়েছে । তার সম্বল এখন শুধু ভিটেমাটির এই
দুই বিঘা জমি। কিন্তু উপেনের কপাল খারাপ। তার এলাকার জমিদার বাবুর ভূমির
শেষ নেই। তবুও জমিদার বাবুর নজর পডলো উপেনের দুই বিঘা জমির উপর। বাবু
উপেনের জমি কিনতে চান। শুনে উপেন বলে, রাজা এই দেশের মালিক আপনি, জায়গার
অভাব নেই কিন্তু আমার এই জায়গাটা ছাড়া মরার মতো ঠাঁই নেই; উপেন দুই হাত
জোড় করে বাবুর কাছে ভিটেটা কেড়ে না নেওয়ার অনুরোধ করে। এতে বাবু রেগে চোখ
গরম করে চুপ করে থাকেন। নাছোড়বান্দা বাবু দেড় মাস পরেই মিথ্যে ঋণের দায়ে
উপেনের প্রতি ডিক্রি জারি করেন। উপেন নিজের ভিটে ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় ।সময়ের
সঙ্গে মানুষের চেহারা বদলায়, পোশাকও বদলায়, কিন্তু চরিত্র বদলায়না ।আগে
রাজা ও জমিদারদের যে প্রত্যাশা ছিল, এখন সে প্রত্যাশা দেশের অনেক সাধারণ
মানুষের। অতিলোভী এসব মানুষের খামখেয়ালিপনায় এখনও মানুষ সর্বশান্ত হয়।
গরিবের ভিটেমাটি গ্রাস করে অত্যাচারীরা গড়ে তোলে আধুনিক নগর সভ্যতা।কবিগুরুর
কবিতার উপেন তার ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর সে তার ভিটেমাটিতে ফিরে এসেছে
কি-না সেটা কবিতায় তুলে ধরা না হলেও প্রভাবশালীদের জন্য সর্বশান্ত হয়ে
এখনকার উপেনরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যুগে যুগে দেশে দেশে
উপেনদের দল ভারি হচ্ছে, আর ঘর ছেড়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে উপেনরা দেশান্তরী হচ্ছে।নিঃস্ব
অসহায় মানুষগুলো পিষে যাচ্ছে, মিশে যাচ্ছে সভ্যতার শেকড়ে। মানব সভ্যতার
আতুড় ঘর সবুজ শ্যামল গ্রামগুলোকে ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে দালান। আর আরো উঁচু
হচ্ছে পাষানের অট্টালিকা।
ফসলি
জমি উজাড় করে চলছে আবাসন বাণিজ্য। আর নিঃস্ব উপেনের দল এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে
গ্রামে-গঞ্জে, শহরে। কারণ তাদের সবকিছুই গ্রাস করে নিয়েছে ভালো মানুষের
মুখোশে থাকা সমাজের দুর্বৃত্তরা । এখন
তো জমিদার প্রথা নেই । কখনো রাজনীতিবিদ ও কখনো আমলার পরিচয়ে তারা
নিজস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা জমিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে । আর
এমনি এক উপেন ভূমিকায় রয়েছে নাটোরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং ফেন্সি বেকারীর
সত্বাধিকারী আলহাজ্ব আব্দুস সালাম । তাঁর অজীবনের স্বপ্ন ছিল নাটোরে তিনি
একটি খাদ্যপণ্য প্রস্তুতের কারখানা করবেন । যেখানে কর্মসংস্থান হবে
নাটোরের অন্ততপক্ষে হাজার খানেক বেকার তরুণ তরুণীর । সে লক্ষ্যে তিনি ২০১৪
সালে শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নের
কাশেমপুর শ্মশান গেটের নিকটে ১ শ ১৮ শতক নিচু জমি ক্রয় করে । ২০১৭ সালে
তিনি নিচু জমিটি ভরাট করার জন্য কয়েক লাখ টাকার ভরাট মাটি ফেলে জায়গাট
উঁচু করে । সম্প্রতি ইঞ্জিনিয়ার কর্তৃক প্ল্যান পাস করে এবং নাটোরের
স্থানীয় একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে এক কোটি ৮০ হাজার টাকা লোন নিয়ে চারতলা
বিশিষ্ট ভবণ নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে । ইতিমধ্যে নিচতলার নবনির্মিত ১০ টি
দোকান প্রতিটি ১০ লাখ টাকা এবং ১১ টি আন্ডার গ্রাইন্ড ফ্লোর প্রতিটি ২
হাজার ভাড়া দিয়ে দেন । ইতিমধ্যে দ্বিতীয় তলার কাজ প্রায় শেষপ্রান্তে ।
ইতিমধ্যে খাদ্যপ্রস্তুত কারখানার জন্য বিদেশ থেকে অত্যধুনিক কেক, বিস্কুট ও
স্বয়ংক্রীয় মেশিন আমদানী করেছেন । হঠাৎ করে চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর
নাটোরের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান আব্দুস সালাম বরাবর চিঠি
পাঠান । চিঠিতে বলা হয়, নিতফশীলভুক্ত জমিটি নাটোর জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট
নির্মাণ কল্পে জনপ্রয়োজনে এবং জনস্বার্থমূলক উদ্দেশ্য প্রয়োজন । সেহেতু
এক্ষণে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ আইন ও হকুম দখল আইন ,২০১৭ (২০১৭ সনের ২১
নম্বর আইন ) ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী সকলের অবগতির জন্য নোটিশ জারি করা হইল
যে ,বর্ণিত সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করা হলো ।
চিঠিটা পেয়ে আব্দুস সালাম হতভম্ব হয়ে যান । তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে ।
কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যখন তিনি নাটোরের বেকার তরুণ তরুণীদের
কর্মসংস্থানের জন্য কারখানা ভবন তৈরী কাজে হাত দিয়েছেন । ইতিমধ্যে
কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানী করে নাটোরে এনেছেন ঠিক সেই
মূর্হতে আমলাদের হঠকারী স্বিদ্ধান্ত তাকে দিশেহারা করে দেয় । অবহেলিত
নাটোরের বেকার সন্তানদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির আব্দুস সালামের অজীবন লালিত
স্বপ্ন একদল আমলার দূরদর্শীতার অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে । সবচেয়ে বড় বিষয়
হচ্ছে , আব্দুস সালামের জায়গাটি ১১৮ শতক হলেও অধিগ্রহণ করা হবে সম্মুখের
৪০ শতাংশ । ফলে বাঁকি জমিটি যাতায়াতের কোন পথ থাকবে না । সচেতন
নাটোরবাসীর প্রশ্ন ..নাটোর সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আজোপাড়া গাঁয়ে
জেলা পার্সপোর্ট অফিস করার কি প্রয়োজন ? যেখানে নাটোর শহরের বিভিন্ন স্থানে
সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের বেশ কয়েকটি পরিত্যাক্ত কোয়ার্টার এবং সরকারী
জায়গা রয়েছে । যে সব স্থান তদারকি এবং নজরদারীর অভাবে অবৈধ দখলদার ও
অপরাধীদের অভয়অরণ্যে পরিণত হয়েছে । সেখানে অনায়াসেই ১০ টি পাসপোর্ট অফিস
করা যাবে । সেক্ষেত্রে জমি ক্রয় করতে হবে না । সেক্ষেত্রে সরকারী টাকার
ব্যয় সংকোচন হবে । এছাড়া দেশের প্রতিটা জেলা শহরেই পাসপোর্ট অফিস করা হয়েছে
। কোন ইউনিয়নের আজোপাড়া গাঁয়ে করা হয়নি ।
কোন গোষ্ঠির স্বার্থে নাটোর শহরে আনাচে কানাচে এতো সরকারী জায়গা থাকার
পরও কর্মসংস্থান মূলক একটি কারখানার জমিতেই জেলা পাসপোটর্ করতে হবে । নাকি
জমি অধিগ্রহণের টাকা হরিলুট এবং পাসপোর্ট অফিসের ঘুষসহ অনৈতিক বাণিজ্য
আড়াল করার জন্য এই পরিকল্পনা । অবিলম্বে নাটোর শহরের পাসপোর্ট অফিস
নির্মানের জোর দাবী জানাচ্ছি ।