মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজের ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, জীবনভর থার্ড ডিভিশন পেলেও আমি নকল করি নাই। নকল করে পাস করে কোনো লাভ হবে না।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এমন ছাত্র হও, যেন দেশবাসী তোমাদের নিয়ে গর্ব করতে পারে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জের ইটনা সদরের আবদুল হামিদ সরকারি কলেজ মাঠে অনগ্রসর হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
লেখাপড়ার গুণগত মান বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মনেপ্রাণে লেখাপড়া করে মেধা অর্জন করতে হবে। এমন শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে যে, অন্য এলাকা থেকে যেমন ইউএনওর মতো সরকারি অফিসার হাওরে এসে কাজ করছেন, তোমরাও অন্য এলাকায় গিয়ে এরকম বড় দায়িত্ব পালন করবে। লেখাপড়া এভাবে শিখতে হবে যেন দেশবাসী তোমাদের নিয়ে গর্ব করতে পারে।
হাওরে বোরো চাষাবাদের সঙ্কট কাটাতে কৃষি বিজ্ঞানীদের নতুন করে গবেষণার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও অকাল বন্যা পার হয়ে ফসল কেটে খোলায় এনে শুকানোর পর গোলায় তোলার আগ পর্যন্ত এ ধান নিয়ে বিশ্বাস নেই। হাওরের কৃষকদের স্বার্থে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে স্বল্প জীবনকালের ধান উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি হাওরে ধান ও মাছ গবেষণা ইনস্টিটিউিট স্থাপনের ঘোষণা দেন। হাওরের কৃষকদের দুর্দশার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, তিনি নিজেও পাঁচ বছর ধরে তাঁর বোরো জমি পত্তন দিতে পারছেন না। দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের এ সঙ্কট কাটানোর কথা ভাববারও তাগিদ দেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, হাওরের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াতের জন্য একদিন ফ্লাইওভার হবে। প্রতিটি উপজেলায় ক্যাডেট কলেজের আদলে একটি করে মডেল স্কুল হবে। মিঠামইনে ক্যান্টনমেন্ট হলে উন্নতমানের স্কুল-কলেজ হবে। সেখানে হাওরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে।
হাওরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক ও কলেজ শিক্ষকসহ সকলকে কর্মস্থলে অবস্থান করে সেবাদানের তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি সকলের উদ্দেশ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ শহরে থেকে অনেকেই দিনে এসে দিনেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। হাওরবাসীর সেবার জন্যই আপনারা নিয়োজিত। যারা হাওরে থাকতে পারবেন না, তারা এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন।
রোববার সকালে কর্মস্থলে এসে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাকার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বহু নেতাও কিশোরগঞ্জের বাসাবাড়ি করে থাকে। জেলা সদরে থেকে নেতাগিরি করা চলবে না। যারা এলাকায় থাকতে পারবেন, তারাই চেয়ারম্যান-মেম্বার হবেন।
কিশোরগঞ্জ ৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের এমপি ও রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে নাগরিক কমিটি আয়োজিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক, ইটনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ইসলাম উদ্দিন, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য বজলুর রহমান, ইটনা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, রায়টুটী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়সাল কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় মঞ্চে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক সারওয়ার মোর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাফিজা আক্তার এবং সমাবেশস্থলে রাষ্ট্রপতির সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ শুরুর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকারি কলেজ চত্বরে তাঁর স্ত্রীর নামে ‘রাশিদা খানম ছাত্রীনিবাস’ ও বাদলা আবদুল হামিদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।