গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সমাচার তিন লাখ মানুষের জন্য মাত্র দুইজন ডাক্তার!

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
৫০ শয্যাবিশিষ্ট নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসক সংকট চলছে। যার ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার তিন লাখ মানুষ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন চিকিৎসক দিয়ে ২৮ জন মেডিকেল অফিসারের কাজ চালানো হচ্ছে।
বিশেষ করে চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একাই প্রতিদিন শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এতে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই। একজন মেডিকেল অফিসার দ্বারা আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। পক্ষান্তরে আউটডোরে কোনো মেডিকেল অফিসার না থাকায় একজন দন্তরোগ চিকিৎসক ও ২ জন স্বাস্থ্য সহকারিকে সেখানে বসিয়ে দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও ১২ জন স্বাস্থ্য সহকারির স্থলে মাত্র ৬জন স্বাস্থ্য সহকারি দ্বারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোর, ইনডোর ও জরুরী বিভাগের চিকিৎসা সেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
অপরদিকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি একযুগ ধরে বিকল অবস্থায় অন্ধকার কক্ষে পড়ে থাকলেও তা মেরামতের জন্য কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। ফলে মুমূর্ষ রোগীরা এক্স-রে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে নেই এনালাইজার ও আল্ট্রাসনোগ্রাফী মেশিন। ফলে রোগীরা বেশী টাকা খরচ করে স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। ক্লিনিকে গিয়ে রোগীরা হয়রানিসহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
জনস্বার্থে দীর্ঘ দশ বছর পর এই হাসপাতালে প্রসূতিদের সিজারিয়ানসহ ছোটবড় অপারেশন শুরু করা হলেও প্রয়োজনীয় দক্ষ চিকিৎসকের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে অপারেশন থিয়েটার। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বৃহত্তর চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম, সিংড়া, তাড়াশ ও চাটমোহর উপজেলার মুমূর্ষ রোগীরা এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
হাসপাতালে পুরুষদের জন্য রয়েছে ২০টি বেড ও মহিলাদের জন্য ২০টি এবং শিশুদের জন্য ১০টি বেডসহ ৫০টি বেডে মুমূর্ষ রোগীদের ভর্তি করানো হয়ে থাকে। অনেক সময় বেডের অভাবেও রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে দেখা যায়। তাছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মির অভাবে তিনটি ওয়ার্ড প্রায়ই দুর্গন্ধময় ও ময়লাযুক্ত হয়ে থাকে। যা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ভুক্তভোগী রোগীরা।
এলাকার অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সরকারি বিধানমতে স্টেশন লিভ বৈধ নয় জানা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বরাবরই নাটোর জেলা সদর থেকে গুরুদাসপুর উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবায় যোগ দেন। নানা সমস্যায় জর্জরিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই অসুস্থ। আগে হাসপাতালের চিকিৎসার প্রয়োজন।