মৌলভীবাজারে শারদীয় দূর্গোৎসব

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ মৌলভীবাজারে শারদীয় দূর্গোৎসব। ঢাকের বাদ্যিতে ছড়িয়ে পড়ছে উৎসবের আমেজ। মানুষে মানুষ, জীবনে জীবন যোগ করার আবাহন নিয়ে এ উৎসব। বেজে উঠছে সুরের সম্মিলিত ঐকতান। প্রকৃতিতে চলছে রূপান্তরের খেলা। এ যেন শরতের প্রতীক। এই শরতেই বেজে উঠছে উৎসবের বাদ্য। শারদীয় উৎসব। উৎসব মানে মহামিলনের দিগন্তকে প্রসারিত করে তোলা। পর¯পরের সঙ্গে প্রাণে প্রাণ মেলানোর এক মোক্ষম আয়োজন ঘটে উৎসবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য এই প্রাণের উৎসবকে গুরুত্ব দিয়েছেন তার সময়কালে। বলেছেন, সবচেয়ে দুর্গম- যে মানুষ আপন-অন্তরালে,/তার পূর্ণ পরিমাপ নাই বাহিরের দেশে কালে। সে অন্তরময়/অন্তর মিশালে তবে তার অন্তর পরিচয়।/ উৎসবের যেমন রয়েছে বহিরঙ্গ, তেমনি তার অন্তরঙ্গেও রয়েছে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, যন্ত্রণার সারাৎসারও। উৎসবের সঙ্গে চিত্তবিত্তের একটা পার¯পরিক স¤পর্ক রয়ে যায়। সমাজের উচ্চ ও নীচ শ্রেণীর মধ্যে উৎসবের আনন্দ একরূপে প্রতিভাত হয় না। নি¤œ অনাহারী অসহায় মানুষের জীবনে উৎসব হচ্ছে সেই দিন, যেদিন সে দুবেলা দুমুঠো খাদ্য পরিপূর্ণতার সঙ্গে ধারণ করতে পারে। সামাজিক বৈষম্যের করুণ রূপটি উৎসবের দিনে সাদা চোখে তাকালে ¯পষ্ট হয়। একদল উৎসবকে সামনে রেখে দেদার ব্যয় করেন। আরেক দল অর্থাভাবে উৎসবে শামিল হওয়ার আয়োজনটুকুও স¤পন্ন করতে পারে না। প্রাণে প্রাণ যোগ হওয়ার ক্ষেত্রগুলো হতে থাকে কেবলই সঙ্কুচিত। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত স্তরে উৎসবের রং একরকম নয়। অর্থ, বৈভব, প্রতিপত্তির দাপটে উৎসব নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে তাদেরই হাতে। অন্যরা দর্শক হয়ে উপভোগের আত্মরক্ষায় শামিল হলেও ভেতরের দারির্দ্য তাকে পীড়িত করে তোলে। শ্রেণীতে শ্রেণীতে বৈষম্য কতদূর বিস্তৃত উৎসবে তা দৃষ্টিগোচর হয় এদেশে-ওদেশে। অন্ধকারের শক্তিকে নিধন, অন্যায়-অবিচারের অপশক্তি ও বর্বর শক্তিকে সংহার করে আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এ ধরনের ধর্মীয় উৎসব শুধু বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্যই নয়; সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির মেলবন্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরমতসহিষুষ্ণতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ধর্মের রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির প্রতি পার¯পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান প্রদান ও এ ধারণাকে মর্যাদাসীন করার লক্ষ্যে মানবিকতায় উজ্জীবিত চেতনার নামই অসাম্প্রদায়িকতা। এই জনপদে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ ও সাবলীল বসবাস এই জাতির ঐতিহ্য-কৃষ্টির উৎকৃষ্ট পরিচায়ক। এই বাংলা ভূখন্ডে প্রত্যেক ধর্মের বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর এ ধরনের ঈদ-রোজা-মহররম-পূজা পার্বণ-বড়দিন-বৌদ্ধ পূর্ণিমার সমীকরণে স্বজাত্যবোধের পরিচিতি অত্যন্ত নন্দিত ও প্রশংসিত। এ অঞ্চলের সমগ্র মানবগোষ্ঠীর প্রকৃত উপলব্ধি হলো- এই দেশ আমার। এই ভাষা সংস্কৃতি, লোকাচার, কৃষ্টি সবকিছুই আমার। আমি এই দেশের বাঙালি সন্তান এবং ধর্মবিশ্বাসে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউবা বৌদ্ধ, কেউবা খ্রিস্টান। জাতিগতভাবে বাঙালি ধর্মবিশ্বাসে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হয়ে দল বেঁধে মসজিদ-মন্দির-গির্জায় যাওয়া, যে যার ধর্ম মতো উপাসনা করা, মুরব্বিদের আশীর্বাদ নেওয়ার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রক্রিয়া চলমান। শুভ মহালয়া থেকে চ-ীপাঠ, মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানায় ভক্তকুল। শাস্ত্র মতে মহাষষ্ঠী ৪ অক্টোবর, শুক্রবার। আর মহাসপ্তমী শুরু হয় ৫ অক্টোবর, শনিবার । সে দিনই নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে অর্থাৎ তাদের শাস্ত্র মতেই ঢাকে কাঠি পড়ে যায় পুজোয়। মহাঅষ্টমীর কাজ গুলো দুপুর থেকেই যেন হয়, আর তা শেষ হয় সন্ধিপুজো সময় পর্যন্ত। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ। সচরাচর বিকেল বেলায় সূর্যাস্তে সময় সিঁদুর খেলার আনন্দে যেন গা ভাসিয়ে এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়েই দুর্গাপুজোর বিদায় জানাবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর মানুষ।