মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ
চাটমোহর শাহী মসজিদ পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এক সময়ে মসজিদটি ধবংস্তুপে পরিণত হয়েছিল। ১৯৮০’র দশকে বাংলাদেশ প্রজাতœতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি সম্পূর্ণরুপে নির্মাণ করে। বর্তমানে এটি একটি সংরক্ষিত ইমারত। মসজিদটিতে একটি তুঘরা লিপিতে উৎকীর্ণ ফারসি একটি শিলালিপি ছিলো। বর্তমানে শিলালিপিটি রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদু ঘরে সংরক্ষিত আছে। এ শিলালিপি অনুসারে ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে জনৈক খান মুহাম্মদ বিন তুকি খান কাকশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন।
পাবনার চাটমোহর শাহী মসজিদ ও বগুড়ার খোরুয়ায় ১৫৮২ অবস্থিত দুটি মসজিদ একই কারুকার্যে ও একই পরিকল্পনায় নির্মিত। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন শতশত মানুষ ভীড় জমায় চাটমোহরে। প্রতিনিয়ত প্রতœতত্ত্ববিদ দেখতে যায় মসজিদটির কারুকার্য পাবনা শহর থেকে মসজিদ ৩০ কিঃমিঃ দূরে। বাস বা টেম্পুযোগে মসজিদটি দেখতে আসে হাজার হাজার মানুষ দুর দুরান্ত থেকে। এছাড়া মসজিদটি থেকে ৫ কিঃমিঃ রয়েছে বিশাল আয়তনে ট্রেন স্টেশন। উৎসুকরা ট্রেনযোগেও মসজিদটি দর্শন করতে আসে।
বাংলায় বিদ্যমান মুগল ইমারতের মধ্যে এ দুটিই সর্বপ্রাচীন নিদর্শন। যদিও ইমারত দুটি মুগল আমলে নির্মিত কিন্তু এগুলি বর্তমান রূপে এ অঞ্চলের সুলতানি স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বক্র কার্নিস, দ্বিকেন্দ্রীক সুঁচালো খিলান, অর্ধবৃত্তাকারের মেহরাব স্কন্ধ ও শীর্ষ চূড়াবিহীন গম্বুজ। ছাদ পর্যন্ত উঁচু পার্শ্ববুরজ, গম্বুজ নির্মাণে বাংলার পেন্ডেনটিতের ব্যবহার সবই সুলতানি স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য। তবে সুলতানি রীতির এসব বৈশিষ্ট্য থাকলেও অন্ততপক্ষে মসজিদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় এ রীতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। বাংলায় তিন গম্বুজ মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল এখানেই। পরবর্তিকালে এ পরিকল্পনার সম্প্রসারণ ও পরিবর্তিত রূপ দীর্ঘদিন যাবৎ এ অঞ্চলের স্থাপত্য প্রভাব বিসস্তার করেছিল।
মসজিদ স্থাপত্যের এ রীতিতে অবশ্যই উত্তর ভারতের প্রভাব রয়েছে। এর উদাহরন পাওয়া যায় প্রথম লোদি ও শুর আমলে। পরবর্তী সময়ে এই পরিকল্পনার আরো বিকাশ ঘটে এবং মুগল আমল জুড়েই এর প্রয়োগ দেখা যায়। উত্তর ভারতীয় রীতিতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গন এবং তাকে নিয়ে ঘিরে রিওয়াকবিশিষ্ট পরিকল্পনার পরিবর্তে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট প্রার্থনাকক্ষ নির্মাণে মুগল রীতি মসজিদ নির্মাণ পরিকল্পনার একটি পরিপুর্ণ রূপ হিসেবেই বিবেচিত হয়। দিল্লির সুনহেরী মসজিদ কিংবা আগ্রার তাজমহলের পাশে নির্মিত (১৬৩৪ খৃঃ) এর উদাহরন। এধরনের ভারতীয় মসজিদ পরিকল্পনাকে বলা যেতে পারে পারস্যের মাহম্মাদিয়ায় অবস্থিত ইওয়ান-ই-কারখা। অথবা মায়াদে অবস্থিত মুসাল্লা এর পরিবর্তিত রূপ।