কোরবানির দিনে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন যেভাবে

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আবার সামনে চলে এলো ঈদ-উল-আযহা। সোমবার (১২ আগস্ট) পবিত্র ঈদুল আজহা। আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ অন্যতম ধর্মীয় উৎসব।

এই ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানির দিন একযোগে বিভিন্ন জায়গায় কোরবানি দেওয়ায় চারিদিকে রক্তের ছড়াছড়ির কারণেও পরিবেশ দূষিত হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত কাঁচা চামড়া ট্যানারির মানুষ এসে নিয়ে যাচ্ছে এবং সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মাঠে নামছে। ততক্ষণ সেই নোংরার মধ্যেই থাকতে হয় সবাইকে। অথচ এসময় একটু সচেতন থাকলেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের হাত থেকে রাক্ষা পাওয়া যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা সম্ভব।

কোরবানির আগে

কোরবানির আগে প্রয়োজনীয় ছুরি আছে কি না এবং সেগুলো যথেষ্ট ধারালো কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন।

কোরবানি দেওয়ার স্থান যথেষ্ট পরিষ্কার আছে কি না সেদিকে নজর দিন। স্থানটি সাবান পানি ছিটিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।

সচাটাই হতে শুরু করে তক্তা পর্যন্ত সব কিছু যোগাড় করে সেগুলো পরিষ্কার করে রাখুন।

জীবন্ত গরু যেন অন্য গরু কোরবানি হতে না দেখে, সম্ভব হলে তা নিশ্চিত করুন। কারণ, গরু এতে ভয় পেয়ে যেতে পারে এবং তখন তাকে কোরবানি দেওয়া কঠিন হবে।

পশুকে অবশ্যই কোরবানির আগে ভালো করে গোসল করিয়ে নিন।

কিছু পলিথিন ব্যাগ আগে থেকে কিনে রাখুন, যা গোশত বিলানোয় কাজে আসবে। যাকে দিবেন তার নাম লিখে রাখুন।

প্লাস্টিকের বালতি, বোল, মগ, ঝাড়ু, চাটাই, দড়ি, নতুন গামছা, সুতি কাপড় ও হাঁড়ি-পাতিল সংরক্ষণে রাখুন।

গোশত সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ অত্যন্ত জরুরি। তাই ফ্রিজ পরিষ্কার করে রাখুন আগে থেকেই।

ঈদের দিন কোরবানি পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণ করুন, নতুবা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আপনার পরিবেশকে করবে অস্বাস্থ্যকর।

কোরবানির ঈদে বাড়ির চার পাশে মাছির উপদ্রব বেড়ে যায়। সে জন্য বাড়ির চার পাশে ব্লিচিং ছিটিয়ে দিন।

গোশত যেখানে সেখানে ফেলে না রেখে দ্রুত পলিথিনে মুড়ে ফ্রিজে রাখুন।

গোশত পরিষ্কারের জন্য কাপড়, কাগজ, টিসু এবং গোশত মাটিতে না রেখে চাটাই ও পলিথিনে রাখুন।

কোরবানির সময়ে

কোরবানি দেওয়ার পর পশুর শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যেতে দিন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চামড়া ছাড়িয়ে ফেলুন এবং তা বিক্রি বা দান করে দিন।

নাড়িভুঁড়ি এবং ক্ষুর আলাদা করে ফেলে দিন, নয়ত মাংসে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটবে।

মাংস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে বিলিয়ে দিন এবং বাকিটা দ্রুত ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন।

অভিজ্ঞ কসাইকে মাংস কাটার দায়িত্ব দিন।

যেখানে কোরবানি দিয়েছিলেন, সে জায়গাটি গুঁড়ো সাবান ছিটিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ধোয়া শেষে ওপরে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিন।

কোরবানির পর

গরুর মাংস কোটা-বাছা করার স্থানটিও আগে থেকে পরিষ্কার করে রাখুন। তবে একটা প্লাস্টিকের শিট বিছিয়ে কাজটা করতে পারলে ভালো হয়।

মাংস থেকে চর্বি কেটে আলাদা করুন। কারণ চর্বি থাকলে মাংস তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়।

ফ্র্রিজে মাংস রাখার জন্য আগে থেকেই পলিথিন ব্যাগ জমা করে রাখুন। একসঙ্গে বেশি মাংস এক ব্যাগে না রেখে আলাদা আলাদা ব্যাগে ভরে রাখুন।

ফ্রিজের সবচাইতে ঠান্ডা অংশে মাংস রাখুন।

কাটাকাটি করার পর হাত, ছুরি এবং ব্যবহৃত পাত্র ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

পশু জবাই এবং পরবর্তী করণীয়

পশু কোরবানি দেওয়ার আগে পশুকে প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে। এতে জবাই করার পর চামড়া ছাড়াতে সুবিধা হবে। পশু কোরবানির স্থান আগেই ঠিক করে নিন। পশু কাটার জন্য ছুরি, দা প্রভৃতি ধার দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। পশুর চামড়া ছাড়াতে অবশ্যই অভিজ্ঞ কসাইয়ের সাহায্য নেবেন। ঠিকমতো চামড়া ছাড়াতে পারলে এর দাম সঠিকভাবে পাওয়া যায়। অনেকে চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকা মাংস বাঁচাতে গিয়ে চামড়া কেটে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ কাটা চামড়ার দাম ও মান অনেক কম। চামড়া ছাড়াতে ধারালো চাকু বা ছুরি ব্যবহার করা চাই। তবে পশু জবাই করার পরপরই চামড়া সাইজ করে নিতে হয়। এতে চামড়া কাটতে সুবিধা হয়। চামড়া কাটা হয়ে গেলে তা থেকে ধূলা ও রক্ত এবং লেগে থাকা মাংস পরিষ্কার করতে হবে। এরপর পর্যাপ্ত লবণ মেখে চামড়া সংরক্ষণ করুন।

আগে থেকেই কসাই ঠিক করে রাখুন। কারণ, ঈদের দিন কসাই পেতে ঝামেলা পোহাতে হয়। জবাই করার পর ময়লা-আবর্জনা জমে যায়। এসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করলে পরিবেশ দূষিত হবে। দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। কোরবানির পরপরই পশু জবাই করার স্থানে স্যাভলন মিশ্রিত পানি ঢেলে রক্ত পরিষ্কার করে নিন। রক্ত যেন শুকিয়ে না-যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন ময়লা যেমন হাড়গোড়, নাড়িভুঁড়ি, চামড়ার কাটা অংশ প্রভৃতি এক স্থানে জমা করে রাখতে হবে। এরপর এমন স্থানে রাখতে হবে, যাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসে নিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া যেসব স্থানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই, সেখানে সব ময়লা-আবর্জনা একত্র করে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। এতে একদিক থেকে যেমন ময়লা-আবর্জনা দূর হবে, অন্যদিকে পরিবেশও ভালো থাকবে।

কোরবানির ঈদের অপরিহার্য একটা অংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। ঈদুল ফিতরে আমরা পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যতটা সচেতন হই তার চেয়ে বেশি সচেতনতা দরকার কোরবানির ঈদে। কারণ এ-সময় রোগজীবাণু ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম জবাই করা পশুর বর্জ্য। তাই এ বিষয়ে সবার সচেতনতা প্রয়োজন।

রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতা

পশু জবাইয়ের পর প্রথমেই মাংস এনে রাখা হয় রান্নাঘরে। মাংসের সঙ্গে লেগে থাকা রক্ত রান্নাঘরের মেঝেতে লেগে যায়। যদি এই রক্ত ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে মাছি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণু প্রবেশ করবে। এতে করে পরিবাবের সদস্যরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে স্যাভলন দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করে নেবেন।