// ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে ঈশ্বরদী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম রবিকে পিটিয়ে আহত করে একটি পিস্তল হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রবি’র স্ত্রী রোজিনা আক্তার। বুধবার (২২ নভেম্বর) উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে রোজিনা দাবি করে বলেন, ‘আমার স্বামী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করার কারণে যুবলীগ নেতা মিলন চৌধুরীর আক্রোশে পড়ে। মঙ্গলবার রাত ১২ টার দিকে সাঁড়া গোপালপুর নিজ বাড়ি থেকে রবিউলকে মিলন চৌধুরীর ছোট ভাতিজা দীপ চৌধুরীর সাথে কয়েকটি মোটর সাইকেলে আসা একদল যুবক ডেকে নিয়ে যায়। রাত দেড়টার দিকে তিনি প্রতিবেশীদের কাছে খবর পান মিলন চৌধুরী ও তার লোকজন রবিউলকে পার্শ্ববর্তী রেল লাইনে ফেলে রেখেছে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তাকে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গতকাল রাতে রবিউলকে অফিসে নিয়ে জোরপূর্বক ছবি তুলে মিলন চৌধুরীর সাথে যোগ দিয়েছেন বলে ফেসবুকে পোস্টও দেয় মিলনের অনুসারীরা। রবিউল এর প্রতিবাদ করায় তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধোর করে রেললাইনে ফেলে হত্যার ভয় দেখিয়ে স্বীকোরোক্তি আদায় করে ফেসবুকে লাইভ করে তারা। এসময় তারা আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর পক্ষ ত্যাগ করে মিলন চৌধুরীর পক্ষে রাজনীতি করার জন্য বলে। এতে রাজী না হলে পরে তারা রেললাইনের ওপর নিয়ে হাত-পা বেঁধে তার কাছ থেকে স্বীকোরক্তি আদায়ের চেষ্টা করে যে, মিলন, উজ্জল ও দ্বীপকে হত্যার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ও যুবলীগ নেতা যুবায়ের বিশ্বাস তাকে পাঠিয়েছে। আমার ফোন পেয়ে পুলিশ এসে রবিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে স্বামীকে অন্যায়ভাবে মারধরের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষিদের আইনের আওতায় নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন রোজিনা।
এসময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা যুবায়ের বিশ্বাস বলেন, আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা এবং মনোনয়ন ঘোষণার পূর্বমূহুর্তে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে, রবিউলকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় , রবিউলকে হাত পা বেঁধে রেল লাইনে ফেলে পেটাচ্ছেন কয়েকজন যুবক। মিলন চৌধুরী রবিউলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাকে নানা প্রশ্ন করছেন। জঙ্গলে ওঁত পেতে থাকা রবিউলের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র গুলিসহ পাওয়া গেছে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও জুবায়ের মিলন ও দীপকে হত্যার জন্য পাঠিয়েছেন কিনা জানতে চাইছেন। একপর্যায়ে, রবিউল তা স্বীকার করলে মিলন বলেন, মিন্টু ও জুবায়েরের সাথে বিএনপির কয়েকজন কর্মী আওয়ামীলীগ শেষ করতে তাকে পাঠিয়েছেন। এ সময় রবিউল আওয়ামীলীগকে নির্যাতন করে শেষ করা যায়না বলে প্রতিবাদ জানালে আবারো মারের ভয় দেখানো হয় ।
তবে, আগ্নোয়াস্ত্র সহ রবিউলকে পুলিশে দেয়ার ঘটনাকে পরিকল্পিত নাটক বলে দাবি করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু। তিনি বলেন, মিলন চৌধুরীর কোন দলীয় পদ নেই। রবিউল আওয়ামীলীগের ত্যাগী কর্মী , সাবেক যুবলীগ নেতা। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ নেই। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন সামনে রেখে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই আমার ও আমার অনুসারী জুবায়ের বিশ্বাসের নামে মিথ্যে অপবাদ দেয়া হচ্ছে। আমি নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
পুলিশ সূত্র জানায়, এলাকাবাসী এবং স্ত্রী রোজিনার ফোন পেয়ে সাঁড়াগোপালপুর এলাকায় রেল লাইনের ওপর থেকে রবিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় একটি দেশীয় ওয়ান সার্টারগান উদ্ধার হয়। তবে রবির বিরুদ্ধে থানায় কেউ কোন অভিযোগ দাখিল করেনি বলে জানা গেছে।
ফেসবুকের লাইভ এবং রবিকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর থানা পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, ডিবি এবং র্যাব ঈশ্বরদীতে অবস্থান নেয়। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন বলেন, পুলিশ, ডিবি এবং র্যাব প্রেসক্লাব এলাকায় আসার কারণে কেউ সংবাদ সম্মেলন করতে আসেনি। মিলন চৌধুরীর লোকজন পরে সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেছে।
এবিষয়ে মিলন চৌধুরী বলেন, আমি এবং আরও ৬-৭ জন রাতে মোটর সাইকেলে বাস টার্মিনালের অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে পাতিবিলের তিনকোণা খাদ এলাকায় রবিসহ আরও ৫-৬জন ওৎ পেতে বসেছিল। আমার সঙ্গি-সাথিরা তাদের তাড়া করলে রবি ছাড়া অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে রবিকে সাড়া গোপালপুর সেন্টারের পাশে রেললাইনের ওপর নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় স্থানীয় লোকজন জমায়েত হয়ে রবিকে মারধর করে। জিজ্ঞাসাবাদে রবি জানায়, উজ্জল, দ্বীপ ও আমাকে গুলি করে মারার জন্য যুবায়ের বিশ্বাস তাদের পাঠিযেছে। পরে পুলিশ এসে রবিকে নিয়ে যায়।
এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী বলেন, অস্ত্রসহ রবিকে উদ্ধারের ঘটনার মধ্যে রহস্য আছে। রবির বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের বা মামলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।