বেনাপোল চেকপোষ্টে প্রতারনা মাধ্যমে জাল ভ্রমন করের অভিযোগে

// ইয়ানূর রহমান : বেনাপোল আন্তর্জার্তিক চেকপোষ্টে দেশী, বিদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের সাথে প্রতারনা, ছিনতাই ও ভ্রমনকর জালিয়াতির অভিযোগে ১০টি ভূয়া প্রতিষ্ঠিানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূইয়ার নেতৃত্বে বুধবার সকালে ওই ১০টি ঘরে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়। তবে পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায় প্রতারকরা। এর আগেও একাধিকবার এসব দোকানে তালা ঝুলিয়ে প্রতারকদের আটক করা হয়। তবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এরা লালিত পালিত হওয়ায় বার বার ছাড়া পেয়ে আবারও প্রতারনায় যুক্ত হয়েছে তারা।
প্রতারনার অভিযোগে তালা ঝুলিয়ে দেয়া ভূয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, চৌধুরী মার্কেটের রবিউল ইসলামের মধুমতি ষ্টোর, ইবাদত হোসেন, মফিজুর রহমান, আমিন উদ্দিন এর দোকান, মসজিদ মার্কেটের ইয়ামিন, ঢাকা হোটেলের পিছনে টিংকু মিয়া, রাজলক্ষী ষ্টোরের মুসা, রেজাউল মার্কেটে মিলন, হোটেল ফ্রেসের এর পাশে শহিদুল ও বাবু কমিশনারের ছেলে সাকিবের দোকান। এরা কেউ প্রতিষ্ঠানের নাম ঝুলিয়ে আবার কেউ কেউ নামবিহীন প্রতিষ্ঠান ঘরে এসব প্রতারনার কার্যক্রম চালাতো।

বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে ময়মনসিংহ ও ঢাকা থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী শারমিন আক্তার (পাসপোর্ট নং এ-০৬০৫৮০৫১) ও জাকির খান (এ-০৫৫৮৮৪) বলেন, আমরা খুব সকালে বেনাপোল এসে গাড়ি থেকে নামি। এরপর বাবু ও রবি নামে দুই জন লোক আমাদের মধুমতি ষ্টোরে নিয়ে ভারত যেতে গেলে ফরমে টাকার নম্বর এবং কত টাকা নিয়ে যাচ্ছি তা লিখতে হবে বলে টাকা গণনা করে। টাকা গুনে আমাদের কাছে আবার টাকা ফেরত দেওয়ার সময় আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর টাকা গুনে দেখি ১০ হাজার টাকা কম। বিষয়টি বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে পুলিশ ঝটিকা অভিযান চালিয়ে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে টাকা উদ্ধার করে দেয়। এসময় পুলিশের অভিযানের সাথে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোক ও উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বেনাপোলের এক শ্রেণীর মাদকসেবী ও প্রতারকরা প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসষ্ট্যান্ড, রেল ষ্টেশন ও বন্দর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে থেকে দ্রুত পাসপোর্টে কাজ করিয়ে দেওয়ার নাম করে এসব দোকানে এনে বসাতো যাত্রীদের। পরে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে জাল ভ্রমন কর রশিদ তৈরী করে, কখনও সাথে থাকা টাকার নাম্বার লেখার কথা বলে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিত। এদের কেউ দোকানের নাম আবার কেউ নাম বিহীন প্রতিষ্ঠান বা দোকান খুলে এসব প্রতারণার চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

গত তিন মাসে বেনাপোল চেকপোষ্টে করোনা ভ্যাকসিন সনদ জালিয়াতি, যাত্রী হয়রানি ও নানান ধরনের প্রতারনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শাওন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে চার বার তালা ঝুলিয়েছিল পুলিশ

এছাড়া বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামের চৌধুরী মার্কেটের মালিক মমিনের ছেলে শামিম বিদেশ ভ্রমন কর জাল করে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল। গত ১৬ নভেম্বের দুপুরে চেকপোস্ট এলাকা থেকে ট্যাক্স জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জাল ভ্রমনকর রশিদ ও সোনালী ব্যাংকের সীলসহ তাকে আটক করে পুলিশ। এ সময় ভারতগামী ৮জন পাসপোর্ট যাত্রীর কাছ থেকে ৮টি জাল ভ্রমন কর রশিদ জব্দও করা হয়। গত এক মাসের মধ্যে দুইবার জাল ট্যাক্সসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় শামিম। জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে নেমে পড়ে সে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূইয়া জানান, যাত্রীদের সাথে প্রতারনার অভিযোগে আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ১০টি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও এমন অভিযোগে কয়েকটি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয় হয়। প্রতারনার স্বীকার যাত্রীর টাকা উদ্ধার করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। যাত্রী নিরাপত্তায় তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান ওসি।#