চরভদ্রাসনের ভুবনেশ্বরে সেই কুমির ধরতে অভিযান

সাজ্জাদ হোসেন সাজু, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি –

ফরিদপুরের ভুবনেশ্বর নদে দুটি কুমিরের দেখা মিলেছে। এতে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুমির দুটিকে ধরতে ইতোমধ্যেই অভিযান শুরু করেছেন বন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুর থেকে কর্মকর্তারা এ অভিযান শুরু করেছেন।


গত বুধবার (১১ অক্টোবর) ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের ব্যাপারীর ডাঙ্গী গ্রামের লোকমান মাতুব্বরের বাড়ির কাছে ভুবনেশ্বর নদে একটি কুমির দেখেতে পায় স্থানীয়রা। কুমিরটি দেখে এলাকাবাসীকে সতর্ক করতে এশার নামাজের পর মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়।

এরপর কুমিরটি ওই এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে তেলিডাঙ্গি এলাকায় অবস্থান করছিল। শনিবার সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা এলাকায় দেখতে পায় স্থানীয়রা।

নদের পানিতে কিছু সময় পর পর মাথা তুলে আবার ডুব দেয় কুমিরটি। কুমিরটি দেখেতে নানা বয়সী উৎসুক মানুষকে রাস্তার দুই পাশে ভিড় করতে দেখা গেছে।


পাটপাশা এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, শনিবার সকালে প্রথমে কয়েকজন নারী ভুবনেশ্বর নদে দুটি কুমির দেখতে পান। তাদের চিৎকার শুনে আমরা গিয়ে দেখি দুটি কুমির জলের মধ্যে রয়েছে। একটি কালো, অপরটি সাদা। মাথা ভাসিয়ে রাখছে, পাঁচ মিনিট পর পর ডুব দিচ্ছে, আবার মাথা তুলছে। নদের পানিতে নদী পাড়ের মানুষ, ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা গোসল করার পাশাপাশি গবাদি পশু গোসল করানো হয়। এখনও কুমির দুটি উদ্ধার না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন তারা। ভয়ে কেউ নামছে না নদের পানিতে।

স্থানীয় বাসিন্দা আরতি রানী বিশ্বাস বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের এলাকায় কুমির দেখা গেছে। রোববার সকাল থেকে আর দেখতে পাচ্ছি না। কালো কুমিরটি অনেক বড়, সাদাটা একটু ছোট।


তিনি আরও বলেন, গোছল করতে নদে আমরা এখন আর কেউ ভয়ে যাচ্ছি না। খুব ভয়ের মধ্যে আছি। ছেলে মেয়েদেরও বলে দিয়েছি নদে না যেতে।


আরেক বাসিন্দা করিম শেখ বলেন, গত বুধবার চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের ব্যাপারী ডাঙ্গী গ্রামের লোকমান মাতুব্বরের বাড়ির কাছে ভুবনেশ্বর নদে কুমির দেখেতে পায় স্থানীয়রা। পরদিন সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে তেলিডাঙ্গি এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়।


তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা এলাকায় ভুবনেশ্বর নদে দেখতে পাওয়া যায়। রোববার সকাল থেকে এখানে পাওয়া যায়নি। আরও দূরে চলে গেছে।

আলিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য মো. বকলুকার রহমান জানান, কুমির দেখা গেছে এমন সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে এসে কুমির দেখতে পাই। পরে থানা ও বন বিভাগকে বিষয়টি অবগত করি।


তিনি আরও জানান, এলাকার সকলকে নদে না নামার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কুমিরটি উদ্ধারে বন বিভাগের কর্মকর্তারা এসেছেন। এখানে জেলেদের আনা হয়েছে, জালও আনা হয়েছে। কুমিরটি উদ্ধার করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।


ইউপি সদস্য আরও জানান, কুমির দুটি বেশিদূর এগোতে পারবে না। কারণ সামনে বাঁধ দেয়া আছে, সেখানে বাঁধা পাবে। ভাটিতে এগিয়ে গেলেও সেখানেই থেমে যাবে। একারণে এই এলাকার মধ্যে কুমিরটি রয়েছে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরাও কুমির উদ্ধারের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

এদিকে কুমিরটি উদ্ধারে রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে বন অধিদফতরের খুলনা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল সদর উপজেলার পাটপাশা এলাকায় আসেন। ওই স্থান পরিদর্শন করেন। কিন্তু কুমিরটিকে আজ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও ওই এলাকায় অবস্থান করছেন তারা।


বন অধিদফতর খুলনা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, ভুবনেশ্বর নদে কুমির দেখা গেছে এমন সংবাদ শুক্রবার আমরা পাই। এরপর ফরিদপুরের বন কর্মকর্তাকে কুমিরের অবস্থান জানাতে বলা হয়।


তিনি আরও জানান, কুমিরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা খুলনা থেকে কুমির দুটিকে উদ্ধারের জন্য এসেছি। গতকাল কুমিরটিকে দেখা গেছে, কিন্তু আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি না। খোঁজ করছি, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।


মফিজুর রহমান জানান, পদ্মা নদী থেকে কুমিরটি চলে এসেছে ভুবনেশ্বরে। এলাকাবাসীকে নদে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় মাইকিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।