// নাটোর প্রতিনিধি- নাটোরের গুরুদাসপুরে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা এবার ব্যাপকহারে পাট চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর খরায় ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে কৃষকেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। বিকল্প উপায় না পেয়ে এবার তারা বাধ্য হয়ে পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। প্রতি বিঘা জমির পাট জাগ দিতে তাদের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার কোথাও কোথাও বিলে পানি না থাকায় নদী,খালবিলের সামান্য পানির দখল নিয়ে চাষিদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির ঘটনাও ঘটছে বলে জানা গেছে।এ সুযোগে কেউ কেউ পুকুরের মাছ বিক্রি করে দিয়ে পাট জাগের জন্য পুকুর লিজ দিচ্ছেন। এতে চাষিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ জানান, অনাবৃষ্টির কারনে উপজেলার কৃষকরা গত বছরের চেয়ে ২৫০ হেক্টর কম পাট চাষ করেছেন। ১৪ হাজার চাষি ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় ও ভালোমতো বর্ষা না হওয়ায় চাষীরা পাট পঁচানো নিয়ে সমস্যায় পরেছেন । পাট পচাতে বিকল্প রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন । কিন্তু কৃষকরা এ পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহী নয় ।
কৃষক আলালঅ উদ্দীন ও ফজের আলী জানান, জমিতে পাট শুকিয়ে গেলেও পানির অভাবে কাটছেন না। অনেকে পাট জাগ দিতে পুকুর-ডোবা ভাড়া নিচ্ছেন। বাড়তি খরচ হলেও অনেক চাষি দূরে ছোট খাল, বিল,নদী-নালা,ডোবায় পাট জাগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ উন্মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দিলেও পানি কমে যাওয়ায় তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন। পানি সংকটে পরিবহন খরচ ও পুকুর ভাড়ার জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের।
গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লার পাট চাষি মজিবর , আলাল মিয়া ও ফরহাদ হোসেনসহ অন্ততপক্ষে ১০জন কৃষক জানান, বৃষ্টি না থাকায় খাল,বিল জলাশয়ে পানি নেই। পাট কেটে জমিতে গাদা করে রেখেছি। সেখানেও রোদে পুড়ে পাট শুকিয়ে যাচ্ছিলো। বাধ্য হয়ে অনেকে বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকায় পুকুর ভাড়া নিয়ে সেখানে পাট জাগ দিচ্ছেন।
তারা আরোও জানান, একবিঘা জমিতে পাট চাষে বীজ ও সার, বপন, পরিচর্যা ও শ্রমিক খরচ মিলে খরচ হয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা। পানি না থাকায় পরিবহন ও পুকুর ডোবা ভাড়া এবং শ্রমিক বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতি বিঘায় গড় উৎপাদন ৮ মণ। প্রতিমণ পাটের বর্তমান বাজার দর ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। ৮ মণের গড় মুল্য ২০ হাজার টাকা। এ দামে পাট বিক্রি করলে খরচ উঠলেও বেশি লাভ হবে না বলে জানান তারা।
একই মহল্লার পুকুর মালিক নজিবর রহমান জানান, পুকুরেও পর্যাপ্ত পানি নেই। বৈদ্যুতিক কিংবা ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে নিজ খরচে। এ কারনে পুকুর ভাড়াও বেড়েছে।
চাচকৈড় হাট এলাকার পাট ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বলেন, আগে বিলে বা নদীতে বেশি পানিতে পাট জাগ দিয়ে উপড়ে কলাগাছ দিয়ে ডুবিয়ে রাখা হতো। এতে পাটের আঁশের রং ভাল হতো। কিন্তু এ বছর অল্প পানিতে কাদামাটি দিয়ে চাপা দিয়ে পাট জাগ দেয়ায় আঁশের রং বেশি ভাল হচ্ছে না, এতে এসব পাটের দাম কম হবে।