রজব আলী হত্যাকান্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মিলন সিকদার গ্রেফতার

পূর্ব শক্রতার জেরে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক আসামি মিলন সিকদার @ চাপা মিলন‘কে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০১/০৪/২০২৩ তারিখ গভীর রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক আসামি ১। মোঃ মিলন সিকদার @ চাপা মিলন(৩৮), পিতা-মৃত আব্দুল মান্নান সিকদার, সাং-চৌদ্দ বুড়িয়া, থানা-নলছিটি, জেলা-ঝালকাঠি’কে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ধৃত আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ভিকটিম রজব আলী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কিন্তু ভিকটিমদের বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায় এবং ধৃত আসামী মিলনের বাসা ছিল যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায়। তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রæপিং ছিল। ভিকটিম এবং ধৃত মিলন দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল। তারা পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করত। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন ভিকটিম রজব আলী তাদের মাদক সেবনের সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে। পরবর্তীতে জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই তারা ভিকটিমের নিকট জামানত দেওয়া মোবাইলটি দাবী করে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রæতার সৃষ্টি হয়। উক্ত শত্রæতার জের ধরে রায়সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা উক্ত মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি জিকুর (র‌্যাব-৩ কর্তৃক গত ১০/০৮/২০২২ তারিখ গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে) নেতৃত্বে ধৃত মোঃ মিলন @ চাপা মিলনসহ রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে। ২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে মোবাইলের দোকানে ভিকটিম রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন ভিকটিম রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা ধৃত মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে ভিকটিম রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে সময় রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়। রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে ০৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়। বিজ্ঞ আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ০১ আগস্ট ২০১৯ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় এবং ধৃত মিলনসহ ০৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

হত্যাকান্ডের পর ধৃত মিলন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গাজীপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখানে ০১ মাস অবস্থান করে স্থান পরিবর্তন করে রাঙামাটিতে ১৫ দিন, বরিশালে ০১ মাস এবং পরবর্তীতে ঢাকায় আসলে সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে ০৪ বছর জেল খেটে ২০১৫ সালে জামিনে বের হয়। জামিনে বের হয়ে সে বেশভ‚ষা পরিবর্তন করে আবার পলাতক জীবনযাপন শুরু করে। পলাতক থাকা অবস্থায় সে রাজধানীর বিভিন্ন বাসে হেলপারি করে জীবিকা নির্বাহ করত। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে নিজে গাড়ী চালনা শিখে বাসচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। ব্যক্তিগত জীবনে সে বিবাহিত এবং তার একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ঢাকা হতে কুয়াকাটার আন্তঃজেলা বাস চালানোর সুবাদে সে তার পরিবার নিয়ে বর্তমানে কুয়াকাটার মহীপুরে একটি ভাড়া বাসায় নকল নাম পরিচয়ে বসবাস করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।