নাটোর প্রতিনিধি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করেছিল। সংবিধান ধ্বংস করে সামরিক আইন লংঘন করে ক্ষমতায় আরোহন করে বিনা বিচারে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিধন করেছিল। গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। তারা এখন গণতন্ত্রের কথা বলে। শিক্ষা মন্ত্রী আজ নাটোরে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে ধাপে ধাপে দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ১৩ বছর কারাভোগ করেছেন। এদেশের প্রতিটি জনপদে ঘুরে বেরিয়েছেন, সাধারণ মানুষকে ত্যাগ স্বীকার করতে শিখিয়েছেন, তাদের মনে সাহস সঞ্চার করেছেন। শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন বুঝতেন, জানতেন। দীর্ঘ আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, সাতই মার্চের ভাষণ একই সূত্রে গ্রোথিত হয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। শুধু স্বাধীনতাই উপহার নয়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে মুক্তির পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণ করে স্বল্পোন্নত দেশের উন্নীত করেন তিনি। এই অগ্রযাত্রাকে নস্যাৎ করতে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। তারা চেয়েছিল এদেশকে পাকিস্তানে ফেরত নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সংবিধানকে ধ্বংস করে জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। ঐসময় নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়। ১৯টি ক্যু’র পরে হত্যা করা হয় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে। নিষিদ্ধ করা হয় সাতই মার্চের ভাষণ, নিষিদ্ধ করা হয় বঙ্গবন্ধু, নিষিদ্ধ করা হয় রণাঙ্গণের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান।
দীপু মনি বলেন, ২১ বছর ধরে সামরিক ও স্বৈরাচারের যাতাকলে পিষ্ট এদেশের মানুষকে পথের দিশা দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ৮১ থেকে ৯৬পর্যন্ত আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি সফল হন। ৯৬ থেকে ২০০১ সালে শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে দেশ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। খাদ্যে স্বয়ংস্বম্পূর্ণতা লাভ করে। ২০০১ থেকে ২০০৮ ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশকে আবার পিছিয়ে দেওয়া হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা’কে ১১ মাস নির্জন কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়। কারাগারের বন্দী জীবনে তিনি ভেঙে পড়েননি। সেখানেই পরিকল্পনা করেন ‘দিন বদলের সনদ’।
শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ একটানা ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষ। বছরের পয়লা দিনে দেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেশের প্রত্যেক অঞ্চলে সবচে’ সুন্দর ভবনটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশ্রয় কেন্দ্রও বটে। গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমানোসহ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন অভুতপূর্ব। কৃষি এগিয়ে গেছে দৃষ্টান্ত হয়ে। পরিবেশের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ সারাবিশ্বে প্রশংসিত। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় আসীন করেছে। উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশ থেকে আমরা চলেছি উন্নত দেশের কাংখিত লক্ষ্যে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এখন আমাদের পথ চলা স্মার্ট বাংলাদেশের ২০৪১ সালের গন্তব্যে। দেশের জনসম্পদ ও পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রণয়ন করা হচ্ছে শতবছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’। উন্নয়নের মহাসড়কে এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমাদের সৌভাগ্য, আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন, সবার নেই। দীপু মনি আরো বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি জনবিচ্ছিন্ন একটি অপশক্তি দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। স্বাধীনতা বিরোধী, শান্তি বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দোসর এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। এদেশ থাকবে, সরকার থাকবে, কিন্তু কোন স্বাধীনতা বিরোধী কোন শক্তি থাকবেনা, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ থাকবেনা। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তিকে প্রতিহত করবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান এর সভাপতিত্বে অনিমা চৌধুরী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি, নাটোর-২ (নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট সাজেদুর রহমান খান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন আক্তার।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জুবায়দা আয়শা সিদ্দিকা এবং নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ জহিরুল ইসলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত নাটোর জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহন করেন। শিক্ষা মন্ত্রী পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পরে তিনি নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ, মাহারাজা জে এন স্কুল এন্ড কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।