নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর জেলা বই মেলায় নেচে গেয়ে মঞ্চ মাতালেন আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় নাটোর শহরের কানাইখালী মাঠে জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগীতায় ‘বাংলার বর্ণিল সংস্কৃতি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য’ স্লোগানকে সামনে রেখে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমী অফিসার আব্দুল রাকিবিল বারী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কালিদাস রায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় নাটোর সদর উপজেলার ‘নশরতপুর আদিবাসী জাগরনী সাংস্কৃতিক দল’ এর ২৩ জন শিল্পী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাঁওতালী শিল্পীরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর গুরুত্বারোপ ও শ্রদ্ধা রেখে দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এসময় সাঁওতালী ভাষায় রচিত গানে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও অবদান তুলে ধরা হয়। পরে অনুষ্ঠানে ঘন্টাব্যাপী সেগমেন্টে সাঁওতালী শিল্পীরা তাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা উপহার দেন। অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় ধরে দর্শনার্থীরা বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাঁওতালী শিল্পীদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন, সর্মিলা হেমব্রম, শ্রাবনী হেমব্রম, রুমা টডড, ক্রিস্টিনা সরেন, অর্পিতা কিসকু, বর্ষ সরেন, মহেশ হেমব্রম প্রমূখ।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কালিদাস রায় জানান, জেলা পর্যায়ে এই ধরণের অনুষ্ঠানের আমাদের শিল্পীদের অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় আমরা আনন্দিত এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ কৃতঙ্গতা জানাই। ভবিষ্যতে এই ধরণের সুযোগ পেলে আমাদের শিল্পীরা আদিবাসীদের নানা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরার সুযোগ পাবে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী অফিসার আব্দুল রাকিবিল বারী জানান, বাংলাদেশ ভূখন্ডের জনসংখ্যার অনেকগুলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ ৮৭ হাজার যা সমগ্র জনগোষ্ঠির প্রায় এক শতাংশের মতো (১.১১%)। এর মধ্যে নাটোর অঞ্চলে প্রায় ২০,৫৩০জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ ৫০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে গেজেটভুক্ত করা হয় যার মধ্যে নাটোরে বসবাসরত রয়েছে ওঁরাও, মুন্ডা, পাহাড়ী, মাল পাহাড়ী, সাঁওতাল, গঞ্জু, মাহাতো, তেলী, বাগদি, মালো। প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষ একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। প্রতিটি সম্প্রদায়ের রয়েছে আলাদা আলাদা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। বাংলাদেশ এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্যময় ও বর্ণিল সংস্কৃতি সংরক্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নির্দেশনায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় সাঁওতালদের পরিবেশনায় বাংলার বর্ণিল সংস্কৃতি শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যৎে চেষ্টা থাকবে গেজেটভুক্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়দের নিয়ে আরো বেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের। এছাড়া প্রতিটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।