সুনামগঞ্জের মধ্যনগর হাওর বাচাঁও আন্দোলন কমিটির মধ্যনগর বাজার শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মানে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন হাওর বাঁধ প্রকল্পের নীতিমালা লংঘন করে পি আই সি কমিটিতে প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে অকৃষক লোকজন দিয়ে প্রকল্প কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে,অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প জনগোষ্ঠীর উপকারে আসে না এমন প্রকল্প হওয়ারও অভিযোগের কথাও উঠেছে। এসব অনিয়ম দুনীতি টাকা দিয়ে কমিটির সভাপতি হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালে আগাম অকালবন্যায় তলিয়ে যায়া বোরো ফসল এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হাওর বাসীকে দেখতে হাওরাঞ্চলে আসেন এবং সকল কৃষকের মাঝে সারাবছর খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছেন। এর পর থেকে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল হয়ে এখন সব হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির পিআইসির মাধ্যমে। হাওরবাসী আশা করেছিল এই তত্পরতার পর ফসল রক্ষা নিয়ে তাদের আর হয়তো ততটা ভাবতে হবে না। বর্তমানে দেখা যায় সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন বাঁধের কাজ শুরু হয় না,
অকালবন্যার হাত থেকে হাওরের ফসল সুরক্ষায় সরকার ২০১৭ সালে সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা প্রণয়ন করে, যেমন কাবিটা নীতিমালার ৪.৮-এ উল্লেখ আছে, ‘পরিচালক, পওর পরিদপ্তর, বাপাউবো, ঢাকা প্রাপ্ত সব স্কিমের একটি তালিকা বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন।’ নীতিমালার ৪.৯-এ ‘দাখিলকৃত স্কিমসমূহ ৩০ অক্টোবরের মধ্যে স্কিমওয়ারি অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম অনুমোদনের, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন ও ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি কোনো বছরই।
সব বাঁধে কাজ শুরু হয়নি এখনো দেরিতে কাজ হলে বন্যার সময় বাঁধের মাটি নরম থাকে এবং পানির তোড়ে সহজেই বাঁধ ভেঙে যায়। তাই সঠিকভাবে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে হাওরের কৃষকের মনে ভয়ের কাজ করছে।
সমস্যা শুধু সময়ের ক্ষেত্রে নয়। সমস্যা রয়েছে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও। কাবিটা নীতিমালা ২০১৭-এ স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে প্রকাশ্যে গণশুনানি করে পিআইসি গঠন করতে হবে। ২০১৮ সালে এর কিছু বাস্তবায়ন দেখা গেছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে গণশুনানি অনেক জায়গায় হয়েছে কিন্তু পি আই সি কমিটি গঠিত হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পছন্দের লোকজন দিয়ে। এতে রাজনৈতিক অনেক হিসাবনিকাশের কারণে সংশ্লিষ্ট হাওরে জমি নেই বা কৃষক নন এমন লোকও পিআইসির সদস্য হয়েছেন। এমনকি অতীতে বাঁধ কাটার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত লোককেও পিআইসিতে সদস্য করা হয়েছে। যার সবই নীতিমালার লঙ্ঘন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে দু-একজন সদস্য বিশেষ করে রাজনৈতিক বেশি প্রভাব খাটান। বাকি সদস্যরা তাদের কথামতো দস্তখত করে যান বলে অভিযোগ আছে। এতে সবার মতামত প্রতিফলিত হয় না।
কোথায় বাঁধ হবে এবং কত টাকা খরচ হবে সেই বিষয়গুলো নির্ধারণ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা। সেক্ষেত্রে অনেক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। একদিকে হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ, অন্যদিকে বাঁধ হওয়া দরকার এমন সব জায়গায় বাঁধ হচ্ছে না। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাই স্কিম নির্ধারণে আরো বেশি জনঅংশগ্রহণ প্রয়োজন। প্রয়োজন কার্যকর গণশুনানি।