ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি এম এ মান্নানঃ
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম বাড়ছে। ফলে প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনটাসা হয়ে পড়ছেন। ভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগে কোন্দল সৃষ্টি করছে অনুপ্রবেশকারীরা। এতে করে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে দ্বিধা বিভক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এখনই অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানো না গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়বে।
ধর্মপাশা উপজেলায় বিগত কয়েক বিএনপি, জামায়াত, জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। এদের মধ্যে অন্যতম পাইকুরাটি ইউনিয়নের বতর্মান চেয়ারম্যান মো. ফেরদৌসুর রহমান। তিনি উপজেলা বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এখানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হয়েছে। তিনি আগামী ইউপি নির্বাচেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়ন চাইবেন। তিনি যদি মনোনয়ন পান তাহলে প্রকৃত আওয়ামী পরিবারের ব্যক্তিরা বঞ্চিত হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. মাসুদ মিয়া হাজি মাসুদ পাইকুরাটি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্থানীয় সাংসদের ভাই হওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছেন। একই ইউনিয়নের বৌলাম গ্রামের এক সময়ের বিএনপি নেতা সাকের হোসেন সাগর তিনিও উপজেলা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নেতা সেজেছেন।
সেলবরষ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. আলা উদ্দিন শাহ এখন সেলবরষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। যিনি স্থানীয় দলীয় কার্যালয়সহ শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের মতো অপরাধের সাথে যুক্ত। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক হোসেন চৌধুরী স্বপন এখন নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁকে এখন স্থানীয় সাংসদের পেছনে ঘুরঘুর করতে ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যায়।
ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নে অ্যাড. আরফান আলী জাসদ নেতা থেকে বর্তমান ধর্মপাশা সদর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। উপজেলা যুবদলের সভাপতি হাবিবুল্লাহ তালুকদারও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সুবিধা নিচ্ছেন। সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে মোকাব্বীর হোসেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা হয়েছেন। একই ইউনিয়নের বাশার মিয়া, শাহ আলম, মারুফ আহমেদ বিএনপি থেকে এখন আওয়ামী লীগ নেতা। সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নে মাহফুজুল ইসলাম বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ বনে গেছেন। জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হাশেম আলম ছিলেন এক সময়ের জামায়াত নেতা। তিনি বিএনপি রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলেন। স্থানীয় সাংসদের চাচা হওয়ার সুবাদে তিনি আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছেন।
ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মোতালিব খাঁন বলেন, উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য বর্তমানে তারা দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেনিয়ার হোসেন খান পাঠান বলেন, উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি মো. আলা উদ্দিন শাহ যেকিনা বাদশাগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি নিজের পায়ে ভাঙচুর করেছে তাকে বিগত ইউপি নির্বাচনে দেওয়া দলীয় প্রতীক নৌকা। সেই সাথে তিনি হয়েছেন সেলবরষ ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি কিভাবে নৌকা পেল আর কিভাবে সভাপতি হলো আমার জানা নাই। আর পাইকুরাটি ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান এক সময় শিবিরের রাজনীতি করে ইবনে সিনায় চাকরী করেছেন।পরে তিনি উপজেলা বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হন। ২০১৪ সালে আওয়ামী যোগ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ঠেক্কা দিয়ে নৌকার মনোনয়ন ভাগিয়ে আনেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। এই দুইজন অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তি কিভাবে দলীয় পদপদী ও দলীয় মনোনয়ন পায় এই বিষয়ে আমি বিষ্মিত।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার কেন্দ্রীয় নির্দেশকে উপেক্ষা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য উনার অনুসারীদেরকে ও উনার আত্মীয় স্বজনকে এবং বিএনপি জামায়াত থেকে লোকজনকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে লোকজনকে প্রভাইড করছেন। সে জন্য আওয়ামী লীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা কোনঠাসা হয়ে আছে। অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বাহির করে দিলে দলের সঠিক গতি ফিরে আসবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিস বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিব।