জেনারেল ফসিউর রহমানের সহধর্মিনী ইডিসিএলের প্রথম মহিলা ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার

বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অবঃ) ফসিউর রহমানের সহধর্মিনী সেলিনা বানু এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোঃ লিঃ (ইডিসিএল) এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ইডিসিএলের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র মহিলা কর্মকর্তা যিনি ইডিসিএল পরিবারে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) পদে পদোন্নতি পেলেন। এই পদোন্নতির খবরে পরিবার এবং তার নিজ এলাকা পাবনার চাটমোহর সহ ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরের বিশিষ্টজনেরা অভিনন্দন জানিয়েছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সেলিনা বানু ১৯৮৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে সম্মান সহ মাইক্রোবিয়াল জিনেটিক্স, মাইকোলজী,ও প্ল্যান্ট প্যাথলজী বিষয় নিয়ে এমএসসি পাশ করেন। ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে ইডিসিএল ঢাকায় ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে বগুড়া ইডিসিএল-এ ১ জুন নিয়োগ পান। উল্লেখ্য তিনি ইন্টারভিউ বোর্ডে জানতে পারেন বগুড়া ইডিসিএলের মাইক্রোবায়োলজী ডিপার্টমেন্ট জন্য এই পদটি। বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন বগুড়ার প্ল্যান্ট ম্যানেজার। উনি বলেন বগুড়াতে কোনো মহিলা কর্মকর্তা বা কর্মচারি নাই এবং আপনি ব্যাচেলর কিভাবে ওখানে একজন মহিলার চাকরি সম্ভব? সেলিনা বানু উত্তরে বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের মধ্যে থেকে যখন পড়াশুনা করে আসতে পেরেছি, এখানেও পারবো। বগুড়াতে নিয়োগ পেলেন ১৯৮৮ সালে সম্ভবত জুন মাসে। যোগ দিলেন বগুড়া প্ল্যান্টে। একমাত্র মহিলা কর্মকর্তা হিসেবে কয়েক বছর চাকরির পর আর একজন মহিলা কর্মকর্তা তার সহকর্মী হিসেবে যোগদান করেন । কর্ম দক্ষতার কারণে সেলিনা বানু বগুড়াতে সবার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন। কর্মজীবনে তিনি অত্যন্ত কর্মনিষ্ঠ, সময়োনুরাগী, বন্ধুবৎসল। সহকর্মিদের বিপদে আপদে ঝাপিয়ে পড়েন। কে অসুস্হ, কার স্ত্রী বা ছেলেমেয়ে অসুস্হ বা কার ছেলে বা মেয়েকে কোন স্কুল কলেজে ভর্তি করতে হবে এসব নিয়ে সীমাহীন চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তিনি। তাকে কনিষ্ঠ সময় থেকেই তার প্রথম প্ল্যান্ট ম্যানেজার যিনি ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন উনি থেকে শুরু করে প্রথম এমডি আনিছুর রহমান (ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন) খুব পছন্দ করতেন। ১৯৯৪ সালে উনার বদলি হয় ঢাকায় ।

ঢাকায় বেশ কয়েক জন মহিলা কর্মকর্তা ও অনন্য বিভিন্ন পদেও মহিলা ছিলেন। সেখানে মেয়েদের একটা সুন্দর পরিবেশ পেলেন। এই কর্মস্থলে তিনি মাইক্রোবায়োলজি সহ ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলে কাজ করতেন। ফার্মাসিষ্ট, ক্যামিষ্টদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়েই কাজ করতেন। তার কাজের দক্ষতায় তৎকালীন এমডি ১৯৯৬ সালে appreciation letter দেন। এভাবেই তিনি কয়েকটি ধাপ এগিয়ে গেলেন। আবার বগুড়া বদলি হলেন । কয়েক বছর পর ঢাকা ফেরেন। কোন কোন সময় পরিবার বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করেছে। কিন্তু সেলিনা বানু ঢাকা অফিসে কাজ করেছেন। আবার সেলিনা বানু ঢাকার অফিসে কাজ করলে পরিবার বগুড়ায় থেকেছেন। তাতে কখনই তিনি আশাহত হননি বা অফিসের প্রতি বা উর্ধ্বতনদের প্রতি মনোঃকষ্ট পাননি। এক সময় চট্টগ্রামে থাকাকলীন পোর্টের সঙ্গে জটিল কিছু সমস্যা হয়। পোর্টের গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং ড্রাগসের গুরুত্ব অনুধাবন করে তৎকালীন এমডি সেলিনা বানুকেে ঔষধ প্রশাসনের কেন্দ্রীয় ল্যাব এ অন দ্যা জব ট্রেনিং এ পাঠান।

ওখানেও তিনি ৯ টা ৫ টা অফিস করতেন এবং সকলের মন জয় করে আসেন। তৎকালীন এমডি- সেলিনা বানুকে ময়মনসিংহ পাঠান সেখানকার প্ল্যান্টটি চালু হবার আগে। সে সময় ইডিসিএল শতোভাগ ল্যাটেক্স আমদানি করতো ম্যালোয়শিয়া থেকে। খুলনা ল্যাটেক্স প্লান্ট সম্পূর্ন উৎপাদন নির্ভশীল ছিলো আমদানীকৃত ল্যাটেক্স এর উপর। দক্ষতার সাথে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই আমাদনী বন্ধ করে প্ল্যান্ট টি সম্পূর্ণ উৎপাদন মুখী করেেন তিনি এবং ল্যাটেক্স আমদানী সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করেন ২০১৪ থেকে। তিনি ময়মনসিংহ থেকে প্রতিদিন মধুপুর যাতায়াত করতেন। ২০১৫ সালে ২২ জুন এক ভয়াবহ গাড়ি এক্সিডেন্টে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। গাড়ি এমন দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল যে, দেখলে মনে হবে এর মধ্যে কেউ বাঁচতে পারে না। মধুপুর প্লান্ট ( ইএলপিপি) অত্যন্ত দূর্গম এলাকার মধ্যে যেখানে দিনের বেলায় পুরুষ মানুষ ভয় পাই, সেই পরিবেশে কোন মহিলা সহকর্মী ছাড়া একক ভাবে প্ল্যান্ট পরিচালনা করতেন । ওখানেও সব সহকর্মিদের তিনি এমনভাবেই আগলে রাখলেন, দেখে মনে হতো তার ছোট ভাই ও সন্তান। প্রশাসনিক কাজে সাহায্য হবে ভেবেে সেলিনা বানু রাজশাহী আইন কলেজ থেকে আইন বিভাগেে পড়াশোনা করেন।
মধুপুর থাকাকলীন প্রোমোশন হওয়ার কথা । সেই প্রোমশন আজ বাস্তবায়িত হলো। চাকুরি জীবনের যবনিকা এই বছরে। ইডিসিএলকে গুডবাই জানাবেন প্রায় ৩৩ বছরের কর্ম জীবন শেষে।