বন জঙ্গলের ঝুঁপড়ি ঘরে বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দেওয়া দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের সনকা সাঁওতাল পল্লীর মধু হাসদা (৮০) জীবনের শেষ বেলায় এসে সরকারী ভাবে পাকা ঘর পাচ্ছে। এমন খবর জানতে পেরে তিনি ছুটে যান নির্মানাধীন ঘর দেখতে। সেখানে গিয়ে ঘরের দেওয়াল জড়িয়ে ধরে হাত দিয়ে দেওয়ালের ইটগুলি স্পর্শ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্যেশ্যে বলেন, সাহেব, সারা জীবন কাটলো জঙ্গলের ঝুপরি ঘরে। জীবনের শেষ বেলায় পাকা ঘরে থাকবো এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। এবার আমাদের ঝুঁপড়ি ঘরের দিন শেষ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সালেহ মোঃ মাহফুজুল আলম সরেজমিনে নির্মাণ কাজ পরিদর্শন গেলে উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্যেশ্যে সুবিধা ভোগী পরিবার গুলি এমন মন্তব্য করেন।
এই সাঁওতাল পল্লীতে ১১টি পরিবারের জন্য সেমিপাকা ঘর নির্মান করা হচ্ছে বলে উপজেলা প্রসাশন সুত্রে জানা গেছে।
“আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার” এ প্রতিপাদ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ “ক” শ্রেণীর পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ৩৫০টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ হচ্ছে এর মাধ্যমে ৩৫০টি পরিবার পুনর্বাসিত করা হবে।
একই রকম প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করে উপজেলা শতগ্রাম ইউনিয়নের হামিদুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ শাহানাজ পারভীন জানান, আমাদের কিছুই ছিল না। খুব কষ্ট করে মানুষের জায়গায় একটি খড়ের ঘর তুলে থাকতাম। ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে রাত-দিন পার করেছি। এবার সেই দুঃখ দুর হতে চলেছে।
তিনি বলেন, শেখ সাহেব আমাদের দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। এবার তার বেটি শেখ হাসিনা আমাদের পাকা ঘর তৈরী করে দিচ্ছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার,ঘর নির্মাণ কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষদের জন্য বরাদ্দ কৃত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ৩৫০ টি ঘরের কাজ প্রায় শেষের দিকে। দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে নির্মাণাধীন ঘর গুলো। ফাকা জায়গায় মনোরম পরিবেশে লাল টিনের ছাউনিতে দৃশ্যমান ঘরগুলো দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।
সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ ডালিম সরকার জানান, এ উপজেলার ১৬টি স্থানে মোট ১১.৫০ একর সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ কাজ ত্বরিত গতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। প্রতি ঘরে ০২টি কক্ষ, ১টি বাথরুম, ১টি রান্নাঘর, বারান্দাসহ প্রতি উপকারভোগী গড়ে ২.০ থেকে ৩.০০ শতাংশ জমি বন্দোবস্তসহ ইতিমধ্যে উপকারভোগী নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে এবং উপকারভোগীগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
বীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল কাদের জানান যে, এ উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহীন পরিবারের সংখ্যা ২০৪৭টি। বর্তমানে ৩৫০টি পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করা হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে সকল গৃহহীনকে মুজিব বর্ষের মধ্যেই পুনর্বাসিত করা হবে। এ প্রকল্পে ঘর প্রতি নির্মাণ মূল্য ১,৭১,০০০/- টাকা। এ উপজেলায় মোট বরাদ্দ ৫,৯৮,৫০,০০০/- টাকা।
গত ৫নভেম্বর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল আনুষ্ঠানিক ভাবে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের, মরিচা ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম চৌধুরী হেলাল উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী, ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নির্মাণকাজসমূহ প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করছেন।