৭ নভেম্বর শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাটমোহরের গুয়াখড়া এলাকার রামের বিলে ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ শিকারের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষার পানি বিল থেকে নেমে যাওয়ার শেষ দিকে সাধারণত হেমন্ত কালে চাটমোহরের বিভিন্ন বিল নদীতে এমন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মৌসুমের শুরুতে শত শত সৌখিন মৎস শিকারী মোবাইল ফোনে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে বিলে মাছ শিকারে আসেন। পলো দিয়ে প্রথম দফা মাছ শিকারের পর পুনরায় কবে কোন বিলে মাছ শিকারে যাওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শনিবার চাটমোহরের রামের বিলে হাজার হাজার সৌখিন মৎস শিকারীকে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। এর আগে গত ৩ নভেম্বররও এ বিলে মাছ ধরার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার সকাল থেকে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, পাবনাসদরসহ আশ পাশের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রুট হয়ে লসিমন, করিমন, ভ্যান, রিকসা, সাইকেল, মোটরসাইকেল যোগে চলে আসেন রামের বিলে। রেল লাইনের ধারে গাড়ি রেখে অনেকে পায়ে হেটে এসে একযোগে মাছ শিকারে পানিতে নামেন। হাত পলো, পাও পলো, নেট পলো ছাড়াও খেওয়া জাল, ঠেলা জাল, কারেন্ট জাল, ডোরা জাল, কোঁচ, হাত খড়াসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায় সৌখিন মৎস শিকারীদের। কৃষক, জেলে, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় রামের বিল। মাছ পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয় এ উৎসবে অংশ গ্রহনেই আনন্দ বলে জানান সৌখিন মৎস শিকারীরা।
পাবনার চাটমোহরের সাঁড়োরা গ্রামের মিলন ভট্টাচার্য্য জানান, প্রায় প্রতি বছরই এ সময় বিভিন্ন বিলে মাছ শিকারে যান তিনি। অন্য বছরের তুলনায় এবার মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সুইগ্রামের আতাউর রহমান স্বপন জানান, রামের বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকারের আনন্দ অনুভূতি অন্যরকম। আমরা মাছ শিকারের আনন্দ উপভোগের জন্য এ সময় টার অপেক্ষায় থাকি।
মাছ শিকারের সময় অপেক্ষাকৃত ছোটরা থাকেন স্বল্প পানিতে। কারো পলোর মধ্যে মাছ পরলে অন্যরা মাছটি ধরতে তাকে সহায়তা করেন। পলোর উপরাংশের মুখ দিয়ে পলোর মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মাছ ধরে লোহার ধারালো শিক দিয়ে মাছ ছিদ্র করে মাজায় বেধে রাখা নাইলন সুতোর হালচেয় বেধে রাখেন মাছ। কখনো কখনো “আল্লাহ আল্লাহ রাসুল বলো লা ইলাহা” এমন সমবেত কন্ঠস্বর মাছ ধরায় যোগ করে আনন্দের বাড়তি মাত্রা। ষোল, বোয়াল, জাপানী রুই, সিলভার কার্প, মিনার কার্প, বড় টাকিসহ বেশ কিছু প্রজাতির মাছ পেতে দেখা যায় মাছ শিকারীদের। কখনো সাড়ি বদ্ধ ভাবে কখনো বিশৃঙ্খল ভাবে মাছ শিকার করতে করতে সর্পিল গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হন তারা। পলোর বাউত দের সামনে থাকেন অন্যান্য জাল দিয়ে মাছ ধরতে আসা সৌখিন ব্যক্তিরা।