‘বন্ধ হোক নারী নির্যাতন, নিশ্চিত হোক দেশের উন্নয়ন’, ‘নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধ করি, নারী বান্ধব দেশ গড়ি’, ‘নিরাপদ নারী, নিরাপদ দেশ, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ এমন শত শত স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রায় দেড় হাজার মানুষের স্বত:ফূর্ত অংগ্রহণে এবং নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিজ্ঞা গ্রহণের মাধ্যমে বগুড়ায় শনিবার সকালে শহরের খোকন পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা পুলিশ আয়োজিত নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বিট পুলিশিং সমাবেশ।
বগুড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলে দলে নারী, পুরুষসহ সমাজের নানা শ্রেণীপেশার মানুষ যোগদান করেছিল উক্ত সমাবেশে যেখানে অংশগ্রহণকারী সকলের মাধ্যমে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে দমনের লক্ষ্যে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার)। সভাপতির বক্তব্যে বগুড়া জেলা পুলিশের কর্ণধার এসপি আশরাফ বলেন, বিট পুলিশিং উক্ত সমাবেশের মাধ্যমে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনকারীদের এক অশনি সংকেত পৌঁছে দেওয়া হলো। নারীদের ইভটিজিং, ধর্ষণের চেষ্টা বা যেকোন ধরণের নির্যাতন করলেও শুধুমাত্র পুলিশ নয়, এদেশের আপামর জনগণ সবাই একসাথে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আর ধর্ষণকারীকে বগুড়া জেলা পুলিশ পরিবার কখনই কোনভাবে ছাড় আগেও দেয়নি আর ভবিষ্যতেও সর্বদা জিরো টলারেন্স থাকবে। তবে তিনি সকলকে পারিবারিক সচেতনতা এবং ছোট থেকেই নিজেদের সন্তানের মাঝে সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী’র সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সালাহ্উদ্দিন আহমেদ, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা: মকবুল হোসেন, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জহুরা ওয়াহিদা রহমান, টিএমএসএস এর নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. হোসনে আরা বেগম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রুহুল আমিন বাবলু, দৈনিক করতোয়ার সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান, বগুড়া জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. গোলাম ফারুক, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল বগুড়ার পিপি এ্যাড. নরেশ মুখার্জ্জী, বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরিন রিক্তা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, পোশাককে যারা ধর্ষণের জন্য দায়ী করে তারা মানসিক বিকারগ্রস্ত। পোষাকই যদি কারণ হয় তাহলে এদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা কেন ঘটে? বর্তমান বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে অনেক বেশী যার দরুণ যেকোন বয়সের মানুষের হাতের কাছেই থাকে পর্ণগ্রাফির নীল জগত যা উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে দ্রুততম সময়ে উন্নত দেশগুলোর ন্যায় বাংলাদেশেও কিছুটা লাগাম টেনে ধরতে হবে। সেই সাথে নিজেদের শালীনতা রক্ষা করে সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সমাবেশে এসময় বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির, ওসি (তদন্ত) রেজাউল করিম রেজা, জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি আসলাম আলী পিপিএম, ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম ও জামিরুল ইসলাম, সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই মঞ্জুরুল হক, এস.আই খোরশেদ আলমসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরবৃন্দ, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মীসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরিশেষে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার প্রতিজ্ঞা গ্রহণের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার)।