জন্মের পর হাসপাতালে যে কদিন ছিল সেকদিন শিশু বেশ ঘুমোচ্ছিল। কিন্তু বাড়ি আসার পর থেকে কিছুতেই রাতে ঘুমোতে চায় না। এমন অভিযোগ লেগেই থাকেে সদ্যোজাতর বাবা-মায়ের। কিন্তু এই সমস্যারও খুব সুন্দর সমাধান করলেন বর্তমানে কেপটাউনের বাসিন্দা গবেষক এই দম্পতি
জন্মের পরের প্রথম সপ্তাহে আমাদের মনে হয়েছিল নতুন বাবা-মা এর কাজটা খুব একটা কঠিন না।
কারণ, এই সময় আমাদের শিশুটি প্রায় সারাদিনই ঘুমতো, যখন জেগে থাকত তখন বেশ ভালো মেজাজেই থাকত, সময়েই খেত।
কিন্তু তারপরেই শুরু হল তার কান্না,
কমতে থাকল ঘুম আর মেজাজ হল খিটখিটে। সাথে যোগ হল কলিকের ব্যাথা!
“বাচ্চা রাতে ঘুমায় না” – এই অভিযোগ বোধহয় প্রায় সব নতুন মা-বাবার মুখেই শোনা যায়। এই বছরের ২৮শে এপ্রিল দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে আমাদের সন্তানের জন্মের পর থেকে ফোনে বা ভিডিওকলে যে প্রশ্নটা প্রায় সমস্ত আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধবের থেকে শুনে আসছি তা হল – “ও রাতে ঘুমোচ্ছে?” সত্যিই যাঁরা সদ্য মা-বাবা হয়েছেন তাঁদের কাছে এই সময়টা খুবই চ্যালেঞ্জের, যখন রাতের পর রাত ছোট্ট ছানাটো ঘুমায় না, কাঁদতে থাকে। সাড়ে চারমাসের মা-বাবা হিসেবে আমরাও ভুক্তভোগী। এই কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়ে আমরা এই বিষয়টা নিয়ে একটু বেশীই ভাবনা-চিন্তা করেছিলাম।
শিশুচিকিৎসক, মাতৃদুগ্ধ বিশেষজ্ঞ (ল্যাকটেশন কনসালটেন্ট), শিশুনিদ্রা বিশেষজ্ঞ (ইনফ্যান্ট স্লিপ কনসালটেন্ট) প্রমুখ পেশাদার ব্যাক্তিদের সাহায্য নেওয়া ছাড়াও নিজেরা এই বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করি। জানার চেষ্টা করি যে শিশুদের ঘুম নিয়ে সর্বশেষ গবেষণা কি বলছে। সেই সব পরামর্শ প্রয়োগের ফল স্বরূপ, মাত্র ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের বাচ্চার দিন ও রাতের ঘুম, খাওয়ার অভ্যাস এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করি। সেই অভিজ্ঞতাই আমরা সবার সাথে ভাগ করে নিতে চাই।
সাধারণতঃ জন্মের পরে প্রথম ১-২ মাস একটি শিশুর জন্য প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৮ ঘন্টার ঘুম জরুরী, তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য। কিন্তু শিশুটি যখন বিশেষতঃ রাতে ঘুমায় না, কান্নাকাটি করে, তখন মূলতঃ তিনটি বিষয় নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। এক, শিশুটি হয়তো পরিমান মত খাওয়ার পাচ্ছে না। দুই, শিশুটি হয়তো অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, খুব ঘুম পাচ্ছে কিন্তু উত্তেজনাবশতঃ ঘুমোতে পারছে না। আর তিন, এইসময় শিশুদের পাচনতন্ত্র অপরিনত থাকার গ্যাস তৈরী হয় এবং পেটে ব্যাথা হয়, যা ‘কলিক’ এর ব্যাথা নামে পরিচিত। এই ব্যাথার কারনে শিশুটির পক্ষে ঘুমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই তিনটি মূল কারন ছাড়াও শিশুবিশেষে অন্যান্য অনেক কারণ থাকতে পারে রাতে না ঘুমানোর বা কান্নাকাটি করার। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের সঠিক মতামত নেওয়াটা খুব জরুরি।