অবশেষে ভাঙ্গুড়ার সেই কর্মকর্তা ঘুষ ফেরতের আশ্বাস দিলেন

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আনছার আলী ভুক্তভোগী তিনজনকে আংশিক টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে এক সালিশ বৈঠকে ভুক্তভোগীদের এই টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ে হয়। এতে ভুক্তভোগীদের পরিবারের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই টাকা সবাইকে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আনছার আলী ও যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহকারী আবু সাঈদ ঢাকার একটি চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গত বছরের জুনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাঁচজন যুবকের কাছ থেকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে সকলেই চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র নিয়ে প্রতারণার শিকার হন। এরপর থেকে দুজন চাকরিপ্রার্থী আনছার আলী ও আবু সাঈদকে ধরপাকড় করে ওই চক্রের কাছ থেকে প্রদানকৃত অধিকাংশ টাকা তুলে নেন। কিন্তু উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের আফসার আলীর ছেলে রাজিউল ইসলামের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন আনছার আলী। এ নিয়ে রাজিউলের পরিবার গত ছয় মাস আগে ওই কর্মকর্তার বাড়ি ঘেরাও করে এবং গত সপ্তাহে বাড়ির সামনের সড়কে পথরোধ করে লাঞ্ছিত করে। এনিয়ে কালের কণ্ঠে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়। এ অবস্থায় গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হেদায়েতুল হক ও ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেলের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত একটি সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে রাজিউল ইসলামকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে তিন লাখ টাকা আনছার আলী ফেরত দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া অপর ভুক্তভোগী একই গ্রামের ইমরান হোসেনের ছেলে সবুজকে ২ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং চাটমোহরের সমাজ গ্রামের বাসিন্দা রিপন নামে আরেকজনকে তিন লাখের মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আনছার আলী ফেরত দিবেন বলে সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে।

টাকা ফেরতে আশ্বাস পেয়ে রাজিউল ইসলামের বড় ভাই সোহাগ আলী জানান, প্রথমে কর্মকর্তা আনছার আলী টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে। তখন বাধ্য হয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নানা প্রকার চাপ দেওয়া হয়। এ নিয়ে একাধিকবার আপত্তিকর ঘটনাও ঘটে যায় ওই কর্মকর্তার সাথে। অবশেষে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে তিন লাখ টাকা ফেরত পেয়েছি। এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে পরিবারে।

সালিশকারীরা বলেন, চাকরি প্রার্থীরা একদিকে চাকরি পায়নি, অন্যদিকে টাকাও হারাতে বসেছিল। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে ওই কর্মকর্তার একাধিকবার অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। তাই শান্তির লক্ষ্যে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের দেয়া বেশিরভাগ টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।