উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাবে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পে ব্যয়ও বেড়ে যায়। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় ১১৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়েছে। সাত বছরে পেরিয়ে গেলেও এর কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আরো দুই বছর সময় বাড়ানো হলো। বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ডের ভেতরে রাস্তাঘাট অনেক সরু ও ভাঙাচোরা। এগুলোকে প্রশস্ত করা ও সুন্দর করার জন্য প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এগুলো কেন হচ্ছে? বলা হয়েছিল যে, ওখানে সমন্বয়ের অভাব ছিল। সভায় লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটিরও দেরি ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে বিরক্ত হয়েছেন। এখানে হাজার হাজার পুণ্যার্থী স্নানে আসেন। স্নানের সময় নদীতে নামে হাজার হাজার লোক, সেজন্য ঘাট তৈরি করে দেওয়া, বড় সিঁড়ি করা—এসব ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই ছোট ছোট কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু যুক্ত করা হয়েছে। বাংলো বানানো, হোটেল বানানো এসব। এগুলো করতে গিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ অনেক বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল কাজটাই করুন। অর্থাত্ রাস্তা প্রশস্ত করুন, ঘাটলা নির্মাণ করুন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনেক সময় প্রকল্প চলাকালীন ‘আইডিয়াওয়ালা’রা এসে নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করেন প্রকল্পে। এটা আর করা যাবে না।
সভায় চরের প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চরে প্রকল্প নেওয়ার আগে এর সুদূর প্রসারি প্রভাব নিয়ে গবেষণা করতে হবে। কারণ ক্রস ড্যাম, রাবার ড্যাম এগুলো দেওয়ার পর অন্য অংশে এর প্রভাব পড়ে। সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ২৬০ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ (ভূমি অধিগ্রহণ) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা জেলার তিতাস ও হোমনা উপজেলায় তিতাস নদী (লোয়ার তিতাস) পুনঃখনন প্রকল্প, ৪০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোঘাট ও খানাবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প, ২৬৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন) (বাপাউবো অংশ) প্রকল্প, ১২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প।