প্রতারণা ওদের পেশা…

নাটোর প্রতিনিধি
ফিটিং শাহীনের প্রতারণা করাই পেশা ও নেশা। নাটোর শহরে আলোচিত-সমালোচিত ফিটিং শাহীন গত শুক্রবার উত্তরা গণভবন চত্বরে নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে একজন পর্যটকের ব্যাগে ইয়াবা ঢুকানোর চেষ্টার অভিযোগে হাতে নাতে ধরে পুলিশে দেয় রাজশাহীর ভাটাপাড়া যুব সংঘের সাধারণ স¤পাদক ইমতিয়াজ জামিল দিপন । ফিটিং শাহীনকে নিয়ে ভিন্ন মিডিয়ায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে একটি প্রতারক চক্রের মুখোশ উন্মোচন করায় সংশ্লিষ্ট মিডিয়া ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন নানা পেশার মানুষেরা।

পুরো নাম শাহীন আলম ।। এলকাবাসী আড়ালে ভালোবেসে ডাকেন ফিটিং শাহীন নাম ডেকে থাকে । মূলত নাটোরে আগত বাহিরের পর্যটকদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বা মাদকদ্রব্য ঢুকিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই নাম হয়েছে ফিটিং শাহীন । শুধু শাহীন নয় এ গ্র“পে আরোও রয়েছে বেশ কয়েকজন ।
যাদের কোন নিদিষ্ট পেশা নেই ।। একটাই কাজ উত্তরা গণভবন আর রানী ভবানী রাজবাড়িতে আসা পর্যটকদের ফিটিং দিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়া এমন অভিযোগ জানিয়েছে এলাকাবাসী ।সন্ত্রাসী প্রকৃতির হওয়ায় কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না ।এছাড়া সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা নিরীহ মানুষের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা পয়সা মটর সাইকেল মোবাইল কেড়ে নেয়া । নাটোরে নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে এক জন পর্যটকের ব্যাগে ইয়াবা ঢুকানোর চেষ্টার সময় শাহীন আলম নামে একজন প্রতারক আটক করে পুলিশে দিয়েছে সাথে থাকা পর্যটক দলের সদস্যরা। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি শাহীন আলম। কিন্তু কথাবার্তায় বেশ চালু। যখন তিনি পর্যটকদের বলেন, ‘আমি ডিবি পুলিশের অফিসার বলছি’ তখন অনেকের পক্ষেই বুঝে ওঠা দায় যে এটি কোনো প্রতারকের কণ্ঠ! তাই এলাকার মানুষ ‘ফিটিং শাহীন’ নামেই চেনেন।ছোটবেলা থেকেই মানুষের ফুট ফরমায়েশ খেটে জীবনের অন্ধকার দিকগুলো দেখতে শিখেছেন শাহীন। তাই প্রতারণাই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

বছর পাঁচেকেই প্রতারণার কৌশলে ফিটিং শাহীন এখন অনেক টাকার মালিক। এরই মধ্যে নাটোরেরএকটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের নেতৃত্ব দেন তিনি। মানুষকে নানা ভাবে প্রতারণা করে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াই তাদের টার্গেট।শাহীনের এ প্রতারণার কৌশল বেশি দিন অজানা থাকেনি।

ওরা ধবধবে সাদা পোশাকধারী। ওদের চলাফেরা-কথাবার্তায়ও রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। ওরা শহরের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলাফেরা করেন নামি-দামি মটর বাইক হাঁকিয়ে। ওদের পোশাক-আশাক দেখে কারো বোঝার উপায় নেই ওরা প্রতারক। ওরা সংঘবদ্ধ। ওরা প্রতারকচক্র। ওরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে শিকারের সন্ধানে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াতো। ওদের টার্গেটে থাকতো চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী ও ব্যবসায়ী। এসব নিরীহ জনসাধারণকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়াই ছিল ওদের মূল পেশাসংঘবদ্ধ এ প্রতারক চক্রের মূল হোতা (দলনেতা) ফিটিং শাহীনের নামে প্রতারণার অভিযোগে নাটোরে মোট ৩টি মামলা রয়েছে। দীর্ঘ ১০/১২ বছর ধরে এভাবে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি।
নাটোরে নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে একজন পর্যটকের ব্যাগে ইয়াবা ঢুকানোর চেষ্টার অভিযোগে আরো দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতারক শাহীন আলমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধায় ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে আটক শাহীন আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে অভিযুক্ত করে নাটোর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা দুজন হলেন, শাহাদৎ হোসেন (৩০) এবং রুবেল পাটোয়ারী (৩২) ।
পুলিশ ও পর্যটকরা জানায়, শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর ভাটাপাড়া যুব সংঘের ১৪জন সদস্য ৭টি মোাটর সাইকেল নিয়ে নাটোরের পাটুল এলাকায় হালতিবিলে ঘুরতে আসে। নাটোর শহর অতিক্রম করে দিঘাপতিয়া গণভন এলাকা ছাড়ার সময় একটি মোটর সাইকেল পিছনে পড়ে। এসময় শাহীনসহ কয়েকজন ওই মোটরসাইকেল আরোহীদের থামিয়ে জোর করে তাদের ব্যাগ তল্লাশীর চেষ্টা করে।
এসময় সে একজনের ব্যাগে ইয়াবা ঢুকানোর চেষ্টা করলে ওই মোটর সাইকেলে থাকা যুবকরা ফোনে তাদের সহযাত্রীদের ডাকে। তারা এসে ঘটনাটি ইমতিয়াজ দিপন নামে এক যুবক ফেসবুক পেজে সরাসারি লাইভ করলে মুহুর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। পরিস্থিতি আঁচ করে শাহীনের সহযোগীরা পালিয়ে যায়। পরে পর্যটকদের ওই টিম শাহীনের পরিচয় জানার জন্য চাপ দিলে সে সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তাকে ধরে নাটোর থানায় সোপর্দ করে।
নাটোর থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান,শাহীন একজন প্রতারক। সে পুলিশের কাছে প্রথমে তার বাড়ী উলিপুর আমহাটি ও বাবার নাম সমশের আলী জানান। পরে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে সে একই এলাকার গোলাম হোসেনের ছেলে । এঘটনায় ভাটাপাড়া যুব সংঘের সাাধারণ স¤পাদক ইমতিয়াজ জামিল দিপন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।