কবি রজনীকান্ত সেন লিখেছিলেন-“বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়–ই-কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই-আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদবৃষ্টি ঝড়ে।” কবির কালজয়ী এ ছড়ায় বাবুই পাখির আবাস আবহমান বাংলার ঐতিহ্য তালগাছকে যেমন এখন আর গ্রামের পথে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় না। তেমনি চোখে পড়ে না, সদা চঞ্চল সৃজনশীল এক শ্রমী শিল্পী ছড়ার সেই বাবুই পাখিরও। আবাসন সংকটে পড়ে পাখিটি এখন বিলুপ্তির পথে। তালগাছ না পেয়ে বাবুই এখন খেঁজুরগাছে বাসা বাঁধছে।
গ্রাম বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর কিম্বা মাঠের পাড়ে সৈনিকের মতো একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে গেছে ইটভাটার আগ্রাসনে। তেমনি হারাতে বসেছে প্রকৃতির শিল্পী পাখির ভোরবেলার কিচিরমিচির সুমধুর ডাকাডাকি আর উড়াউড়ি। এখন এসব চিত্রকল্প শুধুই ভাবুক মানুষদের কল্পনার বিষয়। কখনো-সখনো নিরূপায় হয়ে গ্রামের কুড়ে ঘরের কোনটিতে বাসা বাঁধলেও মূলতঃ তালগাছেই শিল্প নৈপুন্যে বাসা বাঁধতেই বেশী সচ্ছন্দ বোধ করে থাকে চড়–ই পাখি। কিচিরমিচির শব্দে মাঠে প্রান্তরে উড়ে উড়ে খড়কুটো সংগ্রহ করে তালগাছে বাসা বাঁধতো। খড়কুটো জড়ো করে দিনেদিনে কঠোর শ্রম সাধনা করে ক্ষুদ্র এই বাবুই পাখিরা তৈরী করতো শিল্প সুষমামন্ডিত কুঁড়েঘর সদৃশ্য বাসা। সে বাসা ছিলো যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি লাগসই। যে খড়কুটোর বাসা প্রবল ঝড়েও টিকে থাকতো বছরের পর বছর।
গ্রাম বাংলায় এখনো কিছুকিছু বাবুই পাখির উড়াউড়ি চোখে পড়লেও তালগাছে বাবুই পাখির বাসা চোখে মেলা কঠিন। তাহলে কি বাবুই পাখিরাও এখন ইট-কাঠ-লোহা-পাথরের গড়া পাকাঘর খুঁজছে ! পরিবেশ বিপর্যয়ের ধাক্কায় জীববৈচিত্রে এ পরিবর্তন। যদি বাসা ও খাদ্য ব্যবস্থা না থাকে তাহলে ওরা তো হারিয়ে যাবেই।
তবে সুখের কথা পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আগশুয়াইল গ্রামটি এখনো এলাকায় তালগ্রাম/তালবাড়িয়া নামে পরিচিত। সম্প্রতি সেই গ্রামটিতে তালগাছ দেখতে গিয়ে বাবুই পাখির বাসার দেখা মিললো। ওই গ্রামের দুএকটি তালগাছে বাবুইর বাসা ঝুলছে দেখা গেছে। কথা হয় ওই গ্রামের তালেব আলীর সাথে। তিনি বলেন, এ গ্রামে আরো অনেক তালগাছ ছিলো। দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আশপাশে ইটভাটা হয়েছে। মানুষ গাছ কেটে ভাটায় বিক্রি করতিছে। তিনি আরো বলেন, তালগাছ না থাকায় বাবুই পাখি এখন খেজুর গাছে বাসা বাঁধছে।
কিয়াম উদ্দিন নামের একজন জানান, বাবুই পাখি তো তালগাছেই বাসা বানায়। তালগাছ না থাকলি ওরা যাবি কোনে। তবে দেখতিছি বাবুই এখন খেঁজুর গাছেও বাসা বানাচ্ছে।