মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশের তিন প্রকল্পে ১০৫ কোটি ডলার বা ৮ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা হিসাবে) অর্থায়নের অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভা।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি গড়বে উঠবে বলে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে। প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটিকে ঢাকার প্রথম ‘ডিজিটাল অনট্র্যাপ্র্যানার হাব’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। একটি ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা ছাড়াও মহামারির ঝুঁকি কমাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
শনিবার এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘নজিরবিহীন সংকট মোকাবিলায় এটি একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। এই মহামারি দারিদ্র নিরসন ও উন্নয়নে বাংলাদেশের অনেক উল্লেখযোগ্য অর্জন, যেমন জনসাধারণের আয় ও জীবিকাকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের এই প্রকল্পগুলো আরও বেশি ও আরও উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে। ফলে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি গড়বে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ৫০ কোটি ডলার (৪২৫০ কোটি টাকা) অর্থায়নের প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ডিজিটাল অনট্র্যাপ্র্যানারশিপ (প্রাইড) প্রকল্পটি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্কে সামাজিক ও পরিবেশগত মান জোরদার করবে। এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এর মধ্যে সফটওয়্যার পার্কের ৪০ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২০ শতাংশ কর্মসংস্থান হবে নারীর। এই প্রকল্প মিরসরাই-ফেনী অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর-২ এর উন্নয়ন করবে যার মধ্যে থাকবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ সড়ক নেটওয়ার্ক, সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপন এবং জলবায়ু-সহনশীল পানি, স্যানিটেশন ও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কস্থাপন ইত্যাদি। এই প্রকল্পটি জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ঢাকার প্রথম ‘ডিজিটাল অনট্র্যাপ্র্যানার হাব’ গড়ে তুলবে এবং এটিকে একটি সবুজ ভবনে পরিণত করবে। তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) এবং তথ্য প্রযুক্তি সমর্থিত সেবা (আইটিইএস)সহ স্থানীয় এবং বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে প্রকল্পটি কভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিকে সহায়তা করবে বলে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে।
২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার (২৫০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা) অর্থায়নের ‘এনহান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট এন্ড ইকনোমি’ প্রকল্প সরকারের সব সংস্থার জন্য একটি সমন্বিত, অংশীদারিত্বভিত্তিক এবং ক্লাউড-কম্পিউটিং ডিজিটাল প্লাটফর্ম স্থাপন করবে এবং সাইবার নিরাপত্তার উন্নতি ঘটাবে। এর মাধ্যমে সরকারি খাতে আইটি বিনিয়োগে ২০ কোটি ডলারের খরচ বাঁচাবে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রকল্পটির মাধ্যমে ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে যার এক-তৃতীয়াংশ হবে নারী। সেইসাথে ১ লাখ তরুণ-তরুণীকে ডিজিটাল ও নতুন প্রতিস্থাপন প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে। এটি একটি ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে। তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে ৩০ কোটি ডলার আয় বাড়াতে সহায়তা করবে এবং স্থানীয় আইটি কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। মহামারির ঝুঁকি কমাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনবে।
২৫ কোটি ডলার ডলার (২১২৫ কোটি টাকা) অর্থায়নের ‘সেকেন্ড প্রোগ্রামেটিক জবস্ ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্প করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের স্বল্প-মেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে শ্রমজীবী এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা হবে। এই অর্থায়ন বিশেষত নারী, যুব জনগোষ্ঠী, অভিবাসী শ্রমিক এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য বৃহৎ পরিসরে মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এটি একই সিরিজের দ্বিতীয় কর্মসূচি যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় সংস্কারে সহায়তা করবে। সম্প্রসারিত একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর শক্তিশালী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং বিশেষত মহামারির সময় শ্রমিকদের ঝুঁকি কমানো এই প্রকল্পটির অন্যতম লক্ষ্য।