বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ’র ইন্তেকাল

পাবনায় প্রথম শ্রেণীর ভাতাপ্রাপ্ত যোদ্ধাহত (অন্ধ) বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ (৬৫) আজ সকালে ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন…। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ পাবনা সুজানগর উপজেলা মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের মরহুম মোকছেদ আলী মাস্টারের বড় ছেলে, হাতিল পাবনা কমপ্লেক্স’র সত্ত¡াধিকারী এ.কে.এম. মঞ্জুরুল হকের বড় ভাই এবং আনন্দ টিভি পাবনা জেলা প্রতিনিধি সেলিম মোর্শেদ রানার মামা। তার ২ সন্তান সরকারি চাকুরীজীবি। বাদ আছর সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জানাজা শেষে তাকে উলাট কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ ১৯৭১ সালের ১১ই ডিসেম্বর পাবনার সুজানগর থানা শক্রমুক্ত করতে গিয়ে চোখের কোনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।
গত ১১ মে রাজধানীর শ্যামলী স্পেশালাইজড হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর ২টি পা কাটা হয়।
ভাস্কুলার বিশেষজ্ঞ ডা. এম. এস. এ সবুর সাহেব জানান, অড়ৎঃরপ রষরধপ ড়পপষঁংরাব ফরংবধংব নামক রক্তনালীর এক বিরল রোগে মহাধমনী বøক করায় মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদের পা-দুটি কেটে ফেলা হয়। এছাড়াও তিনি এ্যজমা, ডায়াবেটিস, প্রোস্টেটের সমস্যায় ভুগছিলেন।
তিনি বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির ভাতা প্রাপ্ত একজন যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কতৃক ঢাকা কলেজ গেট সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে জে-৬ একটি ফ্লাট বরাদ্ধ পান।
যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ সুজানগর সাতবাড়ীয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। কেচুয়াডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আহম্মেদ তফিজ উদ্দিন মাষ্টার। এরপর বিহার প্রদেশের চাকুলিয়ায় উচ্চতর ট্রেনিং নিয়ে পুনরায় মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানার বেলতলিতে ফিরে আসেন।
মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানার বেলতলিতে ট্রেনিং শেষে ২ আগষ্ট জলঙ্গিঁ বর্ডার হয়ে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধে অংগ্রহণ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ এফ. এফ. গ্রæপের সদস্য ছিলেন। তার এফ. এফ. নং- ভারতীয় ৩৫৮৭৯, চাকুলিয়া নং-৫১১৮ এবং তিনি ৭নং সেক্টরে সেক্টর কমন্ডার মো. নুরুজ্জামানের অধীনে যুদ্ধ করেন। তার আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন সাবেক (পাবনা-২) সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সন্টু।
পাবনা-২ সাবেক সংসদ সদস্য কমান্ডার মকবুল হোসেন সন্টু বলেন, যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ খুব সাহসি যোদ্ধা ছিলেন। তার সাহসিকতায় কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেসময় নাজিরগঞ্জ নদী পথে লঞ্চ যোগে সাতবাড়ীয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করতে আসা পাকিস্তানী সেনাদের উপর বিরতিহীন আক্রমণ চালিয়ে নাজিরগঞ্জ পদ্মা
নদীতে সলিল সমাধি করতে সক্ষম হই। তিনি ১১ই ডিসেম্বর সুজানগর থানা শক্রমুক্ত করতে গিয়ে চোখের কোনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মূল্যবান দুটি চোখ হারান।
সেসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদের বাবাকে সাক্ষাতের জন্য খবর পাঠালে তারা বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে কথোপকথন তৎকালীন সাপ্তাহিক ’মুক্তি বার্তা’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা নিয়ে অন্ধ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ পাশ করেন।
গত মার্চের ১ম সপ্তাহে অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা সরোওয়ার্দি হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার তালাবদ্ধ থাকায় করোনার কারণে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারায় অবস্থার অবনতি হইলে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয় এবং অপারেশন করা হয়।