ইসরায়েলের এক সামরিক গবেষক ড্যানি সোহাম দাবি করেছেন, চীনের এক গবেষণাগার থেকে বিশ^জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তার দাবি ঐ গবেষণাগারে গোপনে জৈব রাসায়নিক অস্ত্র বানায় বেইজিং। ড্যানি সোহাম ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা। চীনের জৈব রসায়নিক মারণাস্ত্র কর্মসুচি গবেষণা করেছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ^ব্যাপি জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র ইসরায়েলেরে কমসুচির উচ্চ পদস্থ বিশেষজ্ঞ ছিলেন কর্ণেল পদমর্যাদার সোহাম। তার দাবি, জৈব রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির গোপন কর্মসুচি চলা একটি ইনস্টিটিউট থেকে প্রাণিবাহি করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে নতুন কেেরানাভাইরাসটি ইতোমধ্যে সেদেশের রাজধানী বেইজিংসহ ২৯ টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিংগাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, সৌদিআরব, কানাডাসহ অন্তত ১২ টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। ড্যানিকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন টাইমস দাবি করেছে, করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা হয় ওই গোপন পরীক্ষাগারে সার্সধর্মী ভাইরাস নিয়ে গবেষণাও চীনের জৈব রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসুচির অন্তর্ভুক্ত। বড় আকারের এই কর্মসুচি বেশ কয়েকটি ধাপে পরিচালনা করা হয়। গত সপ্তাহে পুরোনো এক প্রতিবেদন সামনে এনে রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, ভাইরাস নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে চীনের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির গবেষণাগারটি হচ্ছে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। প্রতিষ্ঠানটিতে মরণঘাতি ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও গবেষণা চালানো হয় বলে ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে চীন। আর এই শহরটি থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ওয়াশিংটন টাইমসকে ড্যানি সোহাম আরো বলেন, ইবোলা, নিপা এবং ক্রিমিয়ান-কঙ্গো হেমোরজিক ফিবার ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় জড়িত ছিলো উহান ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল বায়োসেফটি ল্যাবটি। ইনস্টিটিউট চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের অধীনে হলেও সামরিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জৈব চীন অবশ্য বিতর্কিত জৈব অস্ত্র কর্মসুচি থেকে নতুন করোনাভাইরাসটির উৎপত্তি কিনা জানতে চেয়ে যুক্তরাষ্টের চীনা দুতাবাসের কাছে ইমেইল পাঠালেও কোন উত্তর পায়নি।
চীনা কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা এই ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে কিছুই জানেনা। চীনের রোগ নিয়ন্ত্রক ও প্রতিকার বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক গাও ফু বলেন, উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই রোগ ছড়িয়েছে। উহান ইনস্টিটিউট সার্স ভাইরাসের মত করেই করোনাভাইরাসের গবেষণা করছে। এছাড়া রাশিয়ার তৈরি জৈব অস্ত্র অ্যানথ্রাক্স নিয়েও গবেষণা করছে তারা। সোহামের দাবি , সাসর্ ভাইরাসও চীনের জৈব অস্ত্র তৈরির অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট।
এবিষয়ে বিবিসি বাংলার ভাষ্যকার শাকিল আনোয়ার গত ২০ মার্চ-২০২০, কে ছড়ালো করোনাভাইরাস- যুক্তরাষ্ট্র, চীন না ব্রিটেন? আসলেই কি এটা জীবজন্তুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ঢুকেছে নাকি জীবাণু অস্ত্রের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্দেশ্যমূলক-ভাবে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে?
সংক্রমণ যত ছড়িয়ে পড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ব। শুধু যে সোশাল মিডিয়াই এসব ষড়যন্ত্র তত্বে সয়লাব তাই-ই নয়। কিছু দেশের মূলধারার মিডিয়াও এসব তত্ব প্রচার করছে। ষড়যন্ত্র এসব তত্বগুলো আসছে প্রধানত, যুক্ত রাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইরান থেকে। এসব দেশের সরকারগুলো সরাসরি এসবের পেছনে না থাকলেও সরকারের সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তির কথায় এবং মিডিয়ায় এগুলো স্থান পাচ্ছে।
চীন এবং এবং ইরানের ভেতর থেকে সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। চীনের ভেতর সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন হরদমসে লিখছে, এবং শেয়ার করছে যে, চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র হিসেবে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, একজন চীনা কুটনীতিক তার টুইটার একাউন্টে এক পোস্টে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ও ঝাও লিজয়িান টুইটারে মার্চের ১১ তারিখে মার্কিন একটি কংগ্রেস কমিটির সামনে সে দেশের সেন্টার ফর ডিজিজকন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান রবার্ট রেডফিল্ডের একটি শুনানির ভিডিও ক্লিপ পোষ্ট করেছেন। ঐ ফুটেজে মিঃ রেডফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ইনফ্লুয়েঞ্জা-জনিত মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড নাইন্টিনের কারণে ঐ মৃত্যু। যদিও মিঃ রেডফিল্ড বলেননি কখন ঐসব মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চীনা ঐ কুটনীতিক টুইটারে ঐ ভিডিও ক্লিপ পোষ্ট করে সাথে লিখেছেন, “ সিডিসি ধরা পড়েে গেছে। কখন রোগিটি যুক্তরাষ্ট্রে মারা গিয়েছিলো? কত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলো? কোন কোন হাসপাতালে ? হতে পারে যে সব মার্কিন সেনা উহানে ঐ ভাইরাস এনেছিলো তারাই…. স্বচ্ছ হোন। মানুষকে সত্য জানান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাই। ” মিঃ ঝাওয়ের ঐ টুইট চীনা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ডিভি সিসিটিভিতে প্রচার হয়।
গ্লোবাল টাইমসেও তা ছাপা হয়। এছাড়াও চীনের ভেতর থেকে একাধিক বিজ্ঞানী বলেই চলেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি চীনে শুরু হলেও, এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনে হয়নি। চীনের পাশাপাশি ইরানের ভেতরও ব্যাপক মানুষের বিশ^াস এই জীবাণু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এমনকি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি সরাসরি বলেছেন, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। (সুত্র বিবিসি বাংলা২০ মার্চ-২০২০)।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম স্বয়ং ঘুরেফিরে বলেই চলেছেন, করোনাভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী। মিঃ ট্রাম্পের সহযোগি হিসেবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিই খোলাখুলি বলেছেন করোনাভাইরাস চীনের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়াই বারবার করোনাভাইরাসকে বলেছেন“ চায়না ভাইরাস।”
নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় চীনকে এখন রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। মহামারিতে তাদের ভূমিকা এবং হংকং এর ওপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা নিয়ে বতর্মানে বিশে^র জ¦লন্ত আগুন নেভাতে মরিয়া চীনের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে তারা দুইভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত করোনা মোকাবেলায় চীনের নিজস্ব তৈরি সফলতার গল্প প্রচার করে তাদের পূর্ববর্তী ভুলকে ঢাকা এবং দ্বিতীয়ত তাদের আক্রমণ করা যারা চীনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চায়।
এই যুদ্ধে নিজেদের অধীনস্থদের ব্যস্ত রেখেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বিভ্রান্তের মত আচরণ করছে, এবং বিশ^ জুড়ে চলছে সংকট, সেই মূহুর্তে তার থেকেও বড় ক্যাম্পেইনে ব্যস্ত তিনি। আর তাহলো জাতিসংঘ এবং বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মত সংগঠনগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা যার মাধ্যমে বিশ^কে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। করোনাভাইরাস বিষয়ে চীন অতি সম্প্রতি একটি শে^তপত্র প্রকাশ করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘প্রাণ বাঁচানোই ছিলো চীনা নীতি।’’ তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে চীন বলেছে, প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই ভাইরাসটি সম্পর্কে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাকে তথ্য জানিয়েছে তারা। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।
মোবাইল ফোন নং ০১৭১২২৩২৪৬১