করোনা দুর্যোগে সাড়ে ৮ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুঁটিয়েছে দুদক কর্মকর্তা সোহাগ

সদিচ্ছা এবং কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে যে এই সুন্দর পৃথিবীতে কত ভালকিছু করা সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন বগুড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়ার উপ-সহকারী পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগ। দুদক কর্মকর্তা হিসেবে নয় বাংলা মায়ের এক দামাল ছেলে সেজে দেশের এই ক্রান্তিকালে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় আজ ৪০ দিন যাবত সড়কে ঘুরে ঘুরে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মুখে তিনি তুলে দিয়েছেন একবেলার খাবার।
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে বন্ধ ছিল তার কর্মস্থল দুদক কার্যালয় এমন সময় অন্য সবার মতো ঘরে বসে সময় কাটাতে পারেননি তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে বের হয়ে রাস্তায় রাস্তায় খাবারের হাহাকার করা কিছু মানুষের
আর্তনাদ তাকে কিছু করার জন্যে অদৃশ্যভাবে অনুপ্রাণিত করে ফেলে। যে চিন্তা সেই কাজ গত ১৯ এপ্রিল প্রথম স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে খাবার রান্না করে একশ প্যাকেট করে তা নিয়ে একাই বেরিয়ে পরেন বগুড়ার সড়কে এবং ঘুরে ঘুরে তা বিতরণ করেন রিক্সা-ভ্যানচালক, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, ভাসমান খেঁটে খাওয়া মানুষ, ভিক্ষুকসহ অনেকের মাঝে। পরের দিন আবারো একই পন্থায় খাবারের প্যাকেট হাতে সড়কে বেরিয়ে পরেন মানবিক এই মানুষটি। প্রতিদিন এই খাবার প্রস্তুতে তার খরচ হয় প্রায় ২-৩ হাজার টাকা। প্রাথমিকভাবে নিজের জমানো অর্থ দিয়ে এই কাজ শুরু করলেও সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন পত্রিকায় মানবিক এই উদ্যোগের
প্রচার হলে এগিয়ে আসে দেশ-বিদেশের অনেক বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি স্বপ্নবাজ এবং উদ্যোমী যুবক সোহাগ কে।
প্রাথমিকভাবে বগুড়াতে ১’শ জন দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে গত ২৮ এপ্রিল থেকে নিজ জন্মস্থান গাইবান্ধাতেও তিনি শুরু করেন প্রতিদিন দেড় শতাধিক মানুষের মাঝে এই খাবার বিতরণ কার্যক্রম। যার ধারাবাহিকতায় পুরো
রমজানেও অসহায়দের হাতে খাবারের সাথে সাথে ইফতারও বিতরণ করেছেন তিনি।
নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও প্রতিদিন কিছু সেচ্ছাসেবীর সাথে বগুড়া ও
গাইবান্ধা মিলে এখন পর্যন্ত তিনি সাড়ে ৮ হাজার মানুষের মুখে খাবার তুলে
দিয়ে তাদেরকে দিয়েছেন সাহস এবং সকলের মুখে প্রতিদিন ফুঁটিয়ে যাচ্ছেন হাসি। করোনা দুর্যোগের মাঝেই পবিত্র ঈদুল ফিতরে খাবারের সাথে সাথে
তিনি সড়কে ঘুরে ঘুরে বিতরণ করেছেন নতুন লুঙ্গি, শাড়ি এবং ঈদসামগ্রী।
যদিও এই সোহাগের উদ্যোগেই ২০১৫ সাল থেকেই একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে তার নিজ জেলা গাইবান্ধায় প্রতিবছর বিত্তবানদের সহযোগিতায় ৫
শতাধিক মানুষের মাঝে ঈদের বাজার করে দেওয়ার একটি উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
ছোট্ট একটি উদ্যোগ সোহাগের অজান্তেই সহ¯্রাধিক মানুষকে কতটাই না ঐশ^রিক শান্তি দিয়েছে তা শুধুই অনুধাবনের বিষয়। নিরহংকারী এবং অত্যন্ত সাধারণ জীবন-যাপন করা সদা হাস্যজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগের এই
মানবিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে সরকারী শাহ সুলতান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের
প্রভাষক খায়শেদ আলম শিপন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, দেশের এই
ক্রান্তিকালে অসহায় এবং ভাসমান মানুষগুলোর কথা ভেবে করোনা মোকাবেলার
একজন সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে দুদক কর্মকর্তা সোহাগ যেভাবে কাজ
করে যাচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমেই যে অনেক
বড় কিছু অর্জন সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন দুদকের এই কর্মকর্তা। তার বিতরণ
কার্যক্রম তিনি সামনে থেকে দেখেছেন প্রচারবিমুখ মানুষটি শুধু খাবার বিতরণই নয় প্রতিটি মানুষকে প্রতিনিয়ত যুগিয়ে যাচ্ছেন সাহস এবং
দিচ্ছেন অনুপ্রেরণা। করোনা দুর্যোগে বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিত্তবান কিছু মানবিক মানুষের সহযোগিতায় সোহাগের পরিচালিত এই কার্যক্রম
দেখে নিজে ফোন করে সোহাগের প্রশংসা করে তাকে অনুপ্রাণিতও করেছেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলামও। দীর্ঘ ৪০ দিন যাবত ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগের এই ধারাবাহিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে তার সাথে কথা বললে তিনি
জানান, প্রথম দিকে তিনি নিজ উদ্যোগে এই কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ তার এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং প্রতিদিন সেচ্ছাশ্রম দিয়ে তার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন কিছু সেচ্ছাসেবী তাদের সকলের প্রতি তিনি অন্তর থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করেন। কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়, শুধুমাত্র দেশের প্রতি কর্তব্য এবং দেশের এই
ক্রান্তিকালে দেশমায়ের একজন সন্তান হিসেবে তার এই কার্যক্রম করোনা দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।