দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা । বোরো ক্ষেতে ধান পাকতে শুরু করলেও করোনার প্রভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে এখানকার চাষিরা ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বর্ষা মৌসুমও আসন্য ফলে দ্রুত ধান কাটা না হলে বিপুল পরিমাণ ধান ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,চলতি বছর ১৪হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার ১৪হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় চাষাবাদের জমি রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার ৯২৯ হেক্টর। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৩০০হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধান চাষ হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা গেলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ ধান পাকতে শুরু করলেও শ্রমিক সংকটের কারণে এই এলাকার কৃষকরা ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বর্ষা মৌসুম আসন্ন তাই দ্রুত ধান কাটা না হলে ক্ষতিতে পড়ার আশঙ্কায় ঘুম নেই কৃষকের।
উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের চিন্তামন এলাকার কৃষক মোঃ এজার উদ্দিন জানান, এবার তিনি প্রায় ১০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। এই মুহূর্তে মাঠে ধানের অবস্থা দেখে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি। তবে করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতির কারণে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া না গেলে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়ার চিন্তায় রয়েছেন তার মত অনেক কৃষক। ১০/১২ দিনের মধ্যে পাকা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে বিলম্ব হলে বৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানান তিনি। কৃষক সামিউল আলম জানান, বিগত বছরগুলোতে এসময় রংপুর,কুঁড়িগ্রাম,লালমনিরহাট,গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটতে ৬ থেকে ৭ হাজার শ্রমিক ফুলবাড়ীতে আসতেন। এবার করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গণ-পরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিক আসতে পারছেন না। তাই বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও শ্রমিক সংকটের কারনে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা উৎকন্ঠায় রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এটিএম হামিম আশরাফ বলেন,করোনার কারণে সরকার ও কৃষি বিভাগ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধান কাটার জন্য সরকারী-বেসরকারী উদ্যেগে ৪টি হার্বেস্টার মেশিন প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ৬ মে বুধবার উপজেলার লক্ষীপুর ও খয়েরবাড়ী এলাকায় ডাঃ আনোয়ার এর তৈরী দুটি হার্ভেষ্টার মেশিনের মাধ্যমে বোরো ধান কাঁটার উদ্বোধন করা হবে।
কৃষি
কর্মকর্তা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায়
ধান কাটতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা তাদের নিজেদের উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে
প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজে আসতে পারছেন। এসব
শ্রমিকদের করোনা ঝুঁকি এড়িয়ে থাকার জন্য বন্ধ স্কুলগুলো ব্যবহার করতে
স্ব-স্ব চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তদারকির জন্য কৃষি
কর্মকর্তা,পুলিশ বাহিনীর সদস্য, চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবদের সরকারীভাবে
নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কৃষকের চাহিদানুযায়ী শ্রমিক পাওয়া
যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ##