নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার জুমাইনগর গ্রামের মান্নানের ছেলে মানিককে (২৮) হিরোইন বিক্রির সময় হাতেনাতে আটক করে সচেতন যুবসমাজের কিছু যুবক তাকে গণধোলাই দিয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার রাতে পাশর্^বর্তী মামুদপুর গ্রামের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। গুরুদাসপুর থানার এসআই মো. আখতারুজ্জামান টহলরত অবস্থায় ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় যুবকদের কাছ থেকে এক পুড়িয়া হিরোইন উদ্ধার করেন বলে তিনি জানান। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই ওই মাদকবিক্রেতা পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন যুবসমাজের নামধারী কিছু ছাত্রলীগের কর্মি।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মি রাফসান আহমেদ শাকিল, সালাউদ্দিন, লিটনসহ অনেকেই দাবী করে বলেন, মানিক একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। বেড়গঙ্গারামপুর এলাকার গুলু নামের এক ব্যক্তির কাছে সরাসরি রাস্তার উপরে হিরোইন বিক্রি করছিল সে। এসময় আমরা তাকে হাতেনাতে আটক করি। মানিক পালানোর চেষ্টা করলে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। তারা আরো দাবী করেন, পুলিশ আসার আগেই সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মানিকের কাছে থাকা এক পুড়িয়া হিরোইন পুলিশের হাতে জমা দেয়া হয়েছে। এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।
এদিকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে শুক্রবার সকালে গণধোলাইয়ের শিকার মানিকের বাড়িতে গেলে দেখা যায় আরেকচিত্র। মানিকের বাবা, ভাই, চাচাসহ পারা প্রতিবেশিরা দাবী করে বলেন, তারা এ পর্যন্ত মাদকের সাথে মানিকের কোন সংশ্লিষ্টতার কিছু দেখেননি বা কথাও শুনেননি। মানিককে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।
অপরদিকে গুরুতর আহত মানিক দাবী করে বলেন, পাশর্^বর্তী মামুদপুর মোল্লাবাজার এলাকার ছাত্রলীগ নামধারী শাকিল, সালাউদ্দিন, মবুসহ ৫/৬জন পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একটি বাগানের ভেতর ডেকে নিয়ে গিয়ে আমাকে অহেতুক মারপিট করতে থাকে। আমার কাছে থাকা ৬ হাজার ৩শ’ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে সড়কে এনে আমাকে জোরপূর্বক হিরোইন দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী বলতে বাধ্য করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের সবকথা মানতে বাধ্য হই। পরে তারা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।
মানিক আরো জানায়, আমাকে আহত অবস্থায় স্থানীয়রা গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নেন। হামলাকারীদের সাথে ৭/৮ মাস আগে আমার গাড়ীর ভাড়া না দেয়ায় একটু ঝগড়া-বিবাদ হয়েছিল। সেই প্রতিশোধ নিতেই আমাকে মারপিট করে বাম হাতে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছে মানিক।
স্থানীয় জুমাইনগর-মামুদপুর ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলগের সভাপতি দেরেজ প্রামাণিক, মানিকের বাবা মান্নান, ভাই মজনু, আত্মীয়-স্বজনসহ পারা প্রতিবেশিরা জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মানিকের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে তাকে মারপিটকারীরা এবং পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই মানিককে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিটের রক্তাক্ত চিহ্ন রয়েছে। গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার বাম হাত। এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে পুলিশ প্রশাসনের কাছে বিচার দাবী করেছেন তারা।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম জানান, প্রায় ৫ বছর আগে মানিক গাজা বিক্রি করেছিল। তারপর থেকে আমি তার বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির সাথে কোন সংশ্লিষ্ঠতা দেখিনি। মারপিট করে মানিককে গুরুতর আহত করে স্থানীয় যুবকরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। এখন বিষয়টি সমাধানকল্পে নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগ করে এমন কয়েকজন ছেলে মানিককে মাদকবিক্রি করার সময় গণধোলাই দেয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি। সেসময় সেখানে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় থানা পুলিশের এসআই আখতারুজ্জামান টহল দিতে গিয়ে স্থানীয় ওইসব যুবকদের কাছ থেকে এক পুড়িয়া হিরোইন পায়। এ ব্যাপারে থানায় এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের হয়নি। তবে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।