যশোরের মণিরামপুরে শুক্রবার বিকেলে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে লা’ঞ্ছিত করেন এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে সেই এসিল্যান্ডকে প্রত্যাতার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অ’ভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অ’তিরিক্ত সচিব, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মাহবুব কবির মিলন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো—
‘আমি অনুতপ্ত, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের মে’য়েটির ভুলের দায় আমা’র, আমাদের। আম’রা হয়ত পারিনি, আমাদের সন্তানদের অন্তরের গভীরে ঢুকে মানবিক মূল্যবোধ জাগাতে। আম’রা পারিনি যথাযথ আদব কায়দা শেখাতে। আম’রা পারিনি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সেবক হতে। আম’রা পারিনি আমাদের সন্তানদের নৈতিক অবক্ষয় আর মূল্যবধের পতন ঠেকাতে। আম’রা পারিনি তাঁদের সত্যবাদী হয়ে গড়ে তুলতে। এ দায় একান্ত আমা’র।
অনেকদিন আগের কথা। আমি তখন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারি কমিশনার। পিএস টু কমিশনার স্যারের (বাঘের চেয়েও বেশি ভ’য় পেতাম) রুমের সামনে দিয়ে যেতেই স্যার একটা ফাইল (তাঁর কাজের) ধরিয়ে দিয়ে বললেন, কমিশনার স্যারের কাছে নিয়ে যেতে। এবার বাঘেরও বড় বাঘের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। আমা’র একটা রোগ ছিল। উপ সচিব থেকে সচিব স্যারদের সামনে গেলেই হাত পা কাঁপা শুরু হত। কোম’র ছোট হয়ে প্যান্টের বেল্ট লুজ হয়ে প্যান্ট পড়ে পড়ে ভাব।
কমিশনার স্যার ফাইল দেখে হুঙ্কার দিয়ে আমাকে বকাবকি শুরু করলেন প্রায় পাঁচ মিনিট। রাগে তাঁর হাত পা কাঁপছে। সামনে দুই অ’তিরিক্ত কমিশনার স্যার বসা। ফাইল ছুড়ে দিলেন আমা’র দিকে। ফাইল নিয়ে বের হয়ে আসলাম। বলার সাহস পেলাম না যে, স্যার ফাইলটা আমা’র নয়। মা’থা নিচু আর মুখ অন্ধকার করে পিএস স্যারের হাতে ফাইল দিয়ে বের হয়ে আসলাম। বলার সাহস পেলাম না যে, স্যার আপনার ফাইল, অথচ বকা শুনতে হল আমাকে।
এর কয়েক ঘন্টা পর কমিশনার স্যার পিএস স্যার সহ সব অফিসারকে ডেকে বসালেন। সামনে সেই ফাইল। আবার আমা’র দিকে চেয়ে শুরু করলেন সেই বকাবকি। মা’থা নিচু করে আবার সব শুনলাম। একবারও পিএস স্যারের দিকে তাকাবার সাহস পেলাম না। সবাইকে বিদায় দিয়ে আমাকে থাকতে বললেন। এবার যা বললেন, আমি হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম স্যারের দিকে। ‘আমি জানি ফাইলটা তোমা’র নয়, যার ফাইল, সে ঠিকই জানে ভুলটা তাঁর এবং বকাবকিও তাঁর উদ্দেশ্যে। তুমি মন খা’রাপ করবে না।’
জীবনে সিনিয়রদের নিয়ে বা তাঁদের আচার আচরণ ভুলভ্রান্তি কারো সামনে তো দূরের কথা, নিজে নিজে বিড়বিড় করে তা বলিনি। এখন সিনিয়রদের কাজ নিয়ে ক্লোজ গ্রুপ খোলা হয়। চলে গালাগালি, চামড়া পর্যন্ত ছেলা হয় সেখানে। অংশ গ্রহণকারীদের কারো কারো চাকরির বয়স দুই এক বছর। তাল মেলায় আরও কিছু সিনিয়র।
দুঃখিত, সামনে আরও খা’রাপ সময় আসছে। ভ’য়াবহ দুঃসময়। এখন বলব না। বলব অবসরের পরে। যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন। এ দায় আমা’র। একান্ত আমা’র। প্লিজ আমা’র মে’য়েটিকে আর লজ্জিত এবং অ’পমানিত করবেন না আপনারা।’