ভালোবাসায় সিক্ত সোনার ছেলেরা

সকাল থেকেই গণমানুষের আনাগোনা ছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। সেখানে সাজসাজ রব, উত্সবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। বিশ্বজয়ী সোনার ছেলেরা আসবে, অভিভাবক বিসিবির অপেক্ষার তর সইছিল না যেন! দুপুরের পর প্রায় তিনশ মোটরসাইকেল, মিনিবাস, মাইক্রোযোগে হাজারো মানুষ বিমানবন্দর অভিমুখে যাত্রা করে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১২ কিলোমিটার পথে আপামর জনতার অভিবাদনে সিক্ত হয়েছে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

ঘড়ির কাঁটায় ৬টা ২৬ বাজতেই ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন্স’ পোস্টারে সাজানো মিনিবাসটি মিরপুর স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে। তার আগেই ঘন্টা দেড়েক ধরে সমর্থকদের হর্ষধ্বনিতে মুখর ছিল স্টেডিয়াম প্রাঙ্গন। স্টেডিয়ামে এসেই আকবর বাহিনীকে নিয়ে বোর্ড রুমে মিটিংয়ে বসেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। উল্লসিত জনতা ঠাঁই নেয় ভিআইপি গ্যালারিতে। ঢাক-ঢোলের বাদ্য, ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’, ‘চ্যাম্পিয়ন-চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগানে কেঁপে উঠে গ্যালারি। ঠিক যেন বাংলাদেশ দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সময়টার গ্যালারি। তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে লাল গালিচা পেরিয়ে ট্রফিসহ মাঠে প্রবেশ করে আকবর আলীর দল। বিসিবি সভাপতি, পরিচালকদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন আকবর। মিরপুরের আকাশে দেখা দেয় আতশবাজির ঝলকানি, উড়তে থাকে কনফেত্তি।

উত্সবের এই রেশ কাটিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবি সভাপতি, যুব দলের অধিনায়ক ও হেড কোচ। বিসিবির পরিচালকদের মধ্যে আকরাম খান, জালাল ইউনুস, মাহবুব আনাম, হানিফ ভূইয়া, আজম নাসির, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, খালেদ মাহমুদ সুজনরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী একবার কাপ দেখতে চেয়েছিলেন :যুবাদের বিশ্বজয় সম্পর্কে গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘এটার সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। বিশ্বকাপ বিশ্বকাপই। এটার স্বপ্ন ছিল আমাদের। তারা আমাদেরকে এনে দিয়েছে। এটা সবচেয়ে বড় অর্জন। তারা আমাদের গৌরব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাপ দেখতে চেয়েছিলেন জানিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘২০১৭ সালে আমরা টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারাই। তারপর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পাপন এবার একবার কাপ দেখতে চাই। তখন থেকেই মানে ৩ বছর আগে থেকে পরিকল্পনা করা, চেষ্টা শুরু হয়।’

সেমিফাইনাল জয়ের পরও আকবর-শরীফুলদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘সেমিফাইনালের পর অনেক রাতে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন ওদের সাথে। উনি বলেছেন, আমি ইতালি চলে যাচ্ছি। তবে তোমাদের খেলার খোঁজ রাখবো।’

বিশেষ অনূর্ধ্ব-২১ ইউনিট গঠন করা হবে :এই যুব দলকে নিয়ে অনূর্ধ্ব-২১ দল গঠন করবে বিসিবি। নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমরা ঠিক করেছি অনূর্ধ্ব-২১ ইউনিট গঠন করবো। ২ বছর ওদের বিশেষ ট্রেনিং দিব। এই সময়ে প্রত্যেক খেলোয়াড় মাসে ১ লাখ টাকা করে পাবে। জাতীয় দলের জন্য যেন ওরা প্রস্তুত হতে পারে। বিদেশ সফরে পাঠানো হবে। ২ বছর পর তাদের পারফরম্যান্স রিভিউ করা হবে।’

কিছু পাওয়ার আশায় বিশ্বকাপে যাইনি: আকবর :বাংলাদেশকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেওয়া অধিনায়ক আকবর বলেছেন, বিশেষ কিছু পাওয়ার আশায় বিশ্বকাপে যায়নি তার দল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘কিছু পাওয়ার আশায় আমরা বিশ্বকাপে যাইনি যে বোর্ড থেকে অনেক কিছু আদায় করে নিব। আমাদের টার্গেট ছিল ফাইনাল খেলা।’