শিশুর কৃমি হবার কারণ লক্ষণ ও প্রতিরোধে করনীয় কী?

প্রায় সব শিশুর একটি সাধারণ সমস্যা পেটে কৃমি হওয়া। শিশুর কৃমি শিশুদের পরিপাক প্রক্রিয়ায় বেশ ভালো রকমের প্রভাব ফেলে। শিশুর খাওয়া দাওয়ায় সমস্যা করে, শিশু রোগা হয়ে যায়। কৃমির প্রতিক্রিয়ায় শিশুর স্বাভাবিক জীবন একদম অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। শিশুর প্রতিটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতে প্রভাব রাখে।

কৃমি টুকটাক বড়দেরও হয়। তবে সবচেয়ে বেশি হয় শিশুদের। শিশুদের শরীরে সহজেই বাসা বাধঁতে পারে। সঠিক সময়ে শিশুর কৃমি-এর চিকিৎসা না করলে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আজকের ব্লগে আমরা শিশুর শরীরের কৃমির সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও কৃমি নিয়ে আমাদের কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা সম্পর্কেও।

কৃমি কেন হয়?

কৃমি একধরণের পরজীবী। আমাদের শরীর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে কৃমি জীবনধারণ করে। মূলত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শরীরে কৃমির সংক্রমণ হয়। আরো যে সকল কারণে শিশুর শরীরে কৃমি হতে পারে।

অপরিশোধিত ও দূষিত পানি খাওয়া ও অন্য যেকোন কাজে ব্যবহারের ফলে কৃমি হয়।
শিশুকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখলে।
নিয়মিত শিশুর নখ না কাটলে, চুল পরিষ্কার না করলে।
কোন কিছু খাওয়ার আগে শিশুর হাত না ধুলে। টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত না ধুলে।
নিয়মিত গোসল না করালে।
ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধের বাইরে অন্য কিছু খাওয়ালে।
নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে খালি পায়ে চলাফেরা করলে।
ফল, মূল, শাক, সবজি ভালোভাবে পরিষ্কার করা ছাড়া খাওয়ালে।
শিশুকে নিয়মিত বিরিতীতে কৃমির ঔষধ না খাওয়ালেও কৃমি হতে পারে।

কৃমি সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণা

আমাদের দেশে বহুদিন ধরে কৃমি সম্পর্কে বেশ কিছু ভুল ধারণা রয়েছে-

অনেকে মনে করে বেশি মিষ্টি খেলে শিশুর শরীরে কৃমি হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই ধারণার কোন ভিত্তি নেই।
অনেকে মনে করেন মাছ খেলে শিশুর কৃমি হয়। এই ধারণাটিও ভুল।
চিরতার রস খেলে কৃমি ভালো হয়ে যায় এমন একটি ভুল ধারণা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। চিরতার রসে অনেক ভেষজও গুণাবলি থাকলেও কৃমি প্রতিকারে এর কোন বিশেষ ভূমিকা নেই।
কৃমির ঔষধ শীতে বা ঠান্ডা পরিবেশে খাওয়াতে হয়। এই ধারণার কোন ভিত্তি নেই। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যেকোন সময় কৃমির ঔষধ খাওয়ানো যায়।

কীভাবে বুঝবেন, শিশু কৃমির সংক্রমণে ভুগছে কি না?

পেটে কৃমি হলে শিশুর খাবারের রুচি কমে যায়। পছন্দের খাবারও খেতে চায় না।
পেট ফুলে-ফেঁপে থাকে।
পেটে হুট-হাট ব্যাথা হয়। ব্যথায় শিশু কাঁদে।
শিশুর শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কারণ, কৃমি শরীর থেকে প্রতিদিন গড়ে ০.১ মিলিলিটার রক্ত শুষে নেয়।
কখনো কখনো কৃমির কারণেই শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, চুলকানি, কফ ইত্যাদি দেখা দেয়।
স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ওজন বাড়ে না। কারণ কৃমি শিশুর গ্রহণ করা খাদ্যের এক–তৃতীয়াংশই খেয়ে ফেলে।

কৃমি প্রতিরোধে করণীয়

মূলত শিশুর কৃমি হওয়ার কারণগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে ও সেই অনুযায়ী সন্তানকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখলে এবং সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে কৃমির আক্রমণ থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।

তবে শিশুদেরকে প্রতি ৪ মাস পর পর কৃমির ঔষধ খাওয়ালে শিশুদের শরীরে কৃমির সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত। সাধারণত কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর কোন নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও অন্যান্য কোন শারীরিক সমস্যা থাকলে কৃমির ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কৃমি প্রতিকারে ধরোয়া টিপস

বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকারে শিশুর কৃমি নিরসনে উপকার পাওয়া যায়।

রসুন

রসুন অ্যান্টি-প্যারাসাইট খাবার। রসুনের উপাদান শরীরের জীবাণু ধ্বংসে সাহায্য করে। সাধারণত কাঁচা রসুন শিশুরা খেতে চাইবে না, তাদের জন্য করতে হবে অন্য ফন্দি। এক গ্লাস কাপে দুটো কাঁচা রসুনের কোয়া নিয়ে ভালোভাবে দুধ ফুটিয়ে দুধ ও রসুনের তরল বানাতে পারেন। পরে এই তরল চামুচ দিয়ে শিশুকে খাওয়াতে পারেন।

কাঁচা পেপে

আধ টেবিল চামুচ কাঁচা পেপের রস আর কয়েক ফোঁটা মধু গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। তাছাড়া এক চা চামুচ পেপের বীজ গুড়ো করে এক কাপ কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে তিনদিন খালিপেটে শিশুকে খাওয়ালেও উপকার পাওয়া যায়।

মিষ্টি কুমড়োর বীজ

মিষ্টি কুমড়োয় থাকা বিশেষ উপাদান অন্ত্রের কৃমি মেরে ফেলে। তিন কাপ পানিতে দুই টেবিল-চামচ মিষ্টি কুমড়োর বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে ফুঁটতে দিন ৩০ মিনিট। ঠান্ডা হলে বাচ্চাকে দিন। এছাড়া এক টেবিল চামচ ভাজা মিষ্টি কুমড়োর বীজের গুঁড়োর সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাইয়ে দিন শিশুকে।

গাজর

গাজরে বিশেষ কিছু ভিটামিন, মিনারেল এবং জৈব উপাদান থাকে যা কৃমির ডিম ধ্বংস করতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে। গাজরে উপস্থিত উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, বেটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন-এ এককথায় কৃমির যম। ভিটামিন-এ কৃমির ডিম ধ্বংস করে এবং ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা কৃমির বারবার ফিরে আসাকে প্রতিহত করে।