শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,/হৃদয়ে লাগিল দোলা,/জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা-/কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি/এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম/সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের।”
যার জন্য ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি হয়ে উঠেছে বাঙালির ও বাংলাদেশের সবার, রাজনীতির সেই মহাকবি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে শুক্রবার বিকেলে। যার নেতৃত্বে, যার সংগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, সেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন আজকের এই দিনে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে যান বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে ভারতে স্বল্প সময়ের যাত্রাবিরতি দিয়ে ১০ জানুয়ারি দুপুরে তিনি তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিকেলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তার মেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহেনা ও নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়।
আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে নানা প্রস্তুতি চলছে সারাদেশে। আর জাতির পিতার দেশে ফেরার ঐতিহাসিক ঘটনাকে আরও স্মরণীয় করতে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে সারাদেশে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা (কাউন্টডাউন)।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল মানুষের কল্যাণের জন্য- মুক্তির জন্য। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সংগঠন জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সফল করে তুলবে।
এ বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে শুরু হবে বছরব্যাপী এ উদযাপন। এ ছাড়া গত বছরের ২৫ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এ কার্যক্রম উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। ওইদিন প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সংস্থাটির ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে।
এ দিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপর দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও সব জনসমাগমের জায়গাগুলোতেও একই সঙ্গে ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। সারাদেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্ট, বিভাগীয় আট শহর এবং ৫৩টি জেলা সদর ও দুই উপজেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর মোট ৮৩টি পয়েন্টে ক্ষণগণনা (কাউন্টডাউন) ঘড়ি বসানো হয়েছে। এসব ঘড়িতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ডিসপ্লেতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর ভিডিও প্রদর্শিত হচ্ছে। কিউআর কোডের মাধ্যমে যে কেউ চাইলেই জন্মশতবার্ষিকীর ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ও জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের নানা তথ্য জানতে পারবেন। জানাতে পারবেন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনুভূতি।